'বাংলা চুড়ি'র খোঁজে

পুরান ঢাকার চকবাজারের দোকানগুলোতে ধাতব চুড়ি আসে লালবাগের শহীদনগর থেকে। ছবিটি রোববার তোলা। ছবি: আবদুস সালাম
পুরান ঢাকার চকবাজারের দোকানগুলোতে ধাতব চুড়ি আসে লালবাগের শহীদনগর থেকে। ছবিটি রোববার তোলা। ছবি: আবদুস সালাম

দুই হাত ভর্তি লাল-নীল-বেগুনি-হলুদসহ রংবেরঙের চুড়ি। একটার সঙ্গে আরেকটা লাগলেই রিনিঝিনি শব্দ। ঈদের সাজে চুড়ি না হলেই নয়। আর পছন্দের সেই চুড়ির জোগান দিতে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে চুড়ির কারখানা ও চকবাজারের চুড়ির দোকানগুলোতে।

লালবাগের শহীদনগরের বেশ কয়েকটি চুড়ির কারখানা আছে। বছরের অন্যান্য সময় কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও ঈদের আগে চাহিদা অনুযায়ী চুড়ি তৈরি করতে হিমশিম খায় কারখানাগুলো। গতকাল রোববার দুপুরে সিয়াম মেটালে দেখা যায়, আটজন শ্রমিক কাজ করছেন। মো. মিঠু কাজ করছেন তিন বছর ধরে। তিনি বলেন, ‘বছরের এই সময়টাতে ব্যবসা ভালো হয়। এখন দিনে ১ হাজার ২০০ মুঠ চুড়ি সাপ্লাই দিই। অন্য সময় ৪০০ থেকে ৫০০ যায়।’

লালবাগের একটি কারখানায় চুড়ির গায়ে নকশা কাটছেন একজন শ্রমিক। ছবি: আবদুস সালাম
লালবাগের একটি কারখানায় চুড়ির গায়ে নকশা কাটছেন একজন শ্রমিক। ছবি: আবদুস সালাম

ধাতব তারকে একটি যন্ত্রের মাধ্যমে নকশা করে নির্দিষ্ট আকারে কাটা হয়। এরপর ঝালাই দিয়ে তা রং করে বিভিন্ন কারুকাজ করা হয়। জরি, চুমকি, কাচ, পাথর বসিয়ে নকশা করা হয়। ঝিলিমিলি মেটালের শ্রমিক নাজির হোসেন দেখালেন চুড়ি বানানোর প্রক্রিয়া। তাঁরা ১৬ থেকে ২৪ এর মধ্যে বিভিন্ন আকারের চুড়ি তৈরি করেন। তবে ছোটদের হাতের চুড়ির চাহিদাই বেশি। তবে কাজের জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন নাজির ও আরও কয়েকজন।
জেবা মেটালের মালিক আবদুল জব্বারও শ্রমিক-সংকটের কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময়টাতেই যা একটু ব্যবসা হয়। কিন্তু যে চাহিদা থাকে, সেই পরিমাণে সাপ্লাই দিতে পারি না। কারিগর পাওয়া যায় না।’ আবদুল জব্বারের কারখানার বয়স ১৭ বছর। ঈদের সময় চাহিদা থাকে ২০ জনের শ্রমিকের। কিন্তু এখন ১৬ জন দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।

ছোটদের এই ধাতব চুড়িগুলো বাজারজাত করার জন্য তৈরি। ছবি: আবদুস সালাম
ছোটদের এই ধাতব চুড়িগুলো বাজারজাত করার জন্য তৈরি। ছবি: আবদুস সালাম

আবদুল জব্বার বললেন, শহীদনগরে ৩০টির বেশি চুড়ির কারখানা আছে। তবে এ এলাকা ছাড়াও কামরাঙ্গীরচরে বেশ কিছু চুড়ির কারখানা আছে। তবে সেখানে কাচের চুড়ি তৈরি হয়। চকবাজারের ব্যবসায়ীরা কারখানাগুলো ধাতব চুড়ি মুঠপ্রতি ৫ থেকে ২০ টাকা দরে কেনেন।
চকবাজারের চুড়ির ব্যবসায়ীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের বাজারে তৈরি হওয়া এ চুড়িগুলোকে বলা হয় ‘বাংলা চুড়ি’। মো. রাসেল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাংলা চুড়ি’র চাহিদা গ্রামে বেশি। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি চলে। তিনি আরও বলেন, পয়লা বৈশাখ আর দুই ঈদে তাঁদের ব্যবসা সবচেয়ে বেশি জমে। তবে বললেন, ‘বাংলা চুড়ি’র বাজার কমে যাচ্ছে ভারতীয় ও চীন থেকে আসা চুড়ির জন্য। শহর অঞ্চলে বিদেশি চুড়ির চাহিদা অনেক। গ্রাম এলাকার ক্রেতাদের জন্য তাঁদের এ চুড়ির বাজার এখনো টিকে আছে।

লালবাগের কারখানায় তৈরি চুড়ি প্রায় ১২টি রঙের হয়ে থাকে। রোববার তোলা ছবি। ছবি: আবদুস সালাম
লালবাগের কারখানায় তৈরি চুড়ি প্রায় ১২টি রঙের হয়ে থাকে। রোববার তোলা ছবি। ছবি: আবদুস সালাম