অপহরণের ১০ ঘণ্টা পর চার ছাত্রী উদ্ধার

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় এক উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির চার ছাত্রীকে গত রোববার অপহরণের ১০ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে।

বড়াইগ্রাম থানা-পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো গত রোববার সকাল ১০টার দিকে ওই চার ছাত্রী বাড়ি থেকে একসঙ্গে প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিল। পথে পূর্বপরিচিত রেন্ট-এ-কারের ব্যবসায়ী মাইক্রোবাসের চালক তাদের শিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে মাইক্রোবাসে তুলে নেন। কিছুদূর যাওয়ার পর ওই মাইক্রোবাসে চার তরুণকে তুলে নেওয়া হয়। মাইক্রোবাসটি তাদের নিয়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দিকে যাত্রা শুরু করে।

এক ছাত্রী কৌশলে ঘটনাটি তার অভিভাবককে জানায়। তিনি অপর অভিভাবকদের জানান। পরে অভিভাবকেরা ঘটনাটি বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহরিয়ার খানকে জানান। ওসি ওই মাইক্রোবাসের চালকের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মেয়েদের দ্রুত বাড়িতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। তাতেও ওই চালক সাড়া না দিলে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের মধ্যস্থতায় মেয়েদের ফিরিয়ে দিতে তাঁকে রাজি করানো হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে তিন ছাত্রীকে গুরুদাসপুরের কাছিকাটা এলাকার টোল প্লাজার কাছে বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কে রেখে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মেয়েদের বাড়িতে নিয়ে আসেন তাদের অভিভাবক ও স্বজনেরা। অন্য মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনতে পুলিশ আরও তৎপরতা চালায়। একপর্যায়ে পুলিশ অভিযুক্ত এক অপহরণকারীর বাবাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে অপর ছাত্রীকে স্থানীয় ওই ইউপি সদস্যের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে এক ছাত্রীর বাবা বলেন, ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে অভিযুক্ত অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মাধ্যমে মামলা না করার তদবির চালানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবকবলেন, ‘ওই নেতারা থানায় ঘোরাফেরা করছেন। তাঁরা শুধু আমাদের জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে গ্রামে বসে বিচার করা হবে। মেয়েদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমরাও মামলা করতে যাইনি।’

এদিকে অভিযুক্ত মাইক্রোবাসের চালককে ঘটনার পর থেকে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। অপর তরুণদের ব্যাপারেও বিস্তারিত জানাতে পারেনি ছাত্রীদের অভিভাবক ও পুলিশ।

ওসি শাহরিয়ার বলেন, ঘটনাটি শোনার পর তিনি নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে ছাত্রীদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতে কেউ তাঁর কাছে আসেননি। এ কারণে মামলা হয়নি বা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এক তরুণের বাবাকে আটক করা হয়েছিল। তবে তিনি এক মেয়েকে উদ্ধারে সহযোগিতা করায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল জলিল গতকাল সোমবার বলেন, তিনিও ঘটনাটি শুনেছেন। তবে এর জন্য কারা দায়ী, তা তিনি বলতে পারবেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তাঁদের কোনো নেতা-কর্মী রক্ষার চেষ্টা করছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি দু-একজন ছাত্রীদের উদ্ধারের জন্য পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন।’