পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪০

উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। ছবিটি রাঙামাটির রাঙাপানি এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
উদ্ধারকর্মীরা উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। ছবিটি রাঙামাটির রাঙাপানি এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে আজ বুধবার ১৪০-এ পৌঁছেছে। অনেকে এখনো নিখোঁজ। তাঁদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন কাজ করছেন।

আজ এসব এলাকা থেকে ১৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্য চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে একটি করে দুটি, রাঙামাটিতে ১২টি, বান্দরবানে দুটি, খাগড়াছড়িতে একটি ও কক্সবাজারের টেকনাফে দুটি লাশ উদ্ধার হয়।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

চট্টগ্রাম : জেলার রাঙ্গুনিয়া থেকে মো. সুমন (১৭) নামের একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) মো. কামাল হোসেন।
ফটিকছড়ির ইউএনও দীপক কুমার রায় জানিয়েছেন, এখানে পাহাড়ধসে কালিন্দী চাকমা নামের একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ি। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ি। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

রাঙামাটি : প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে রাঙামাটিতে। আজ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। এর মধ্যে ভেদভেদি থেকে মা-মেয়েসহ পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। মায়ের নাম পন্তি সোনা চাকমা (৩৫) ও মেয়ের নাম সান্ত্বনা চাকমা (৯)। যুব উন্নয়ন এলাকা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রুপালি চাকমা (৩৫) ও তাঁর দুই মেয়ে জুঁই চাকমা (১২) ও ঝুমঝুমি চাকমা (৭)।

বান্দরবান : ফায়ার সার্ভিসের বান্দরবান স্টেশনের কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা দুইটার দিকে জেলার লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে আজিজুর রহমানের নিখোঁজ স্ত্রী কামরুন্নাহার (৪৫) ও মেয়ে সুখিয়া আক্তারের (১৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

খাগড়াছড়ি : জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি ইউনিয়নের পরিমল চাকমা গরু আনতে গিয়ে পাহাড়ধসে মারা গেছেন। লক্ষ্মীছড়ি থানার ওসি আরিফ ইকবাল
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কক্সবাজার : টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া গ্রামে পাহাড়ের মাটি ও গাছ চাপা পড়ে মোহাম্মদ সেলিম (৪০) ও তাঁর মেয়ে টিসু মনি (৩) মারা গেছে।
হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, রাতে ভারী বর্ষণ ও বজ্রপাতের সময় হঠাৎ করে একটি গাছসহ পাহাড়ের অংশবিশেষ ধসে পড়ে। এতে মাটির ঘরের অংশবিশেষ মাটি ও গাছ চাপা পড়ে। ওই অংশে বাবা মোহাম্মদ সেলিম ও তাঁর মেয়ে টিসু মণি ঘুমিয়ে ছিল। পরে স্থানীয় লোকজন দ্রুত গিয়ে বাবা-মেয়েকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।

রাঙামাটি শহরতলির ভেদভেদি এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রের চিত্র। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
রাঙামাটি শহরতলির ভেদভেদি এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রের চিত্র। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

টেকনাফের ইউএনও মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, কয়েক দিন ধরে পাহাড়ে পাদদেশে বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য মাইকিং করা হলেও তারা শুনছে না। নিহত দুজনের দাফন সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে ৪০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।

ইইউ রাষ্ট্রদূতের শোক
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য তিন জেলায় পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আজ এক বিবৃতিতে তিনি নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। প্রয়োজনে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব উপশমে ইইউ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন এই রাষ্ট্রদূত।