লেখাপড়ার খরচ জোগাতে দিনমজুরি বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রের

কাঠফাটা রৌদ্র, ঝরছে ঘাম, শুকিয়ে আসছে গলাটাও। তবুও থেমে নেই ওঁরা। লক্ষ্য একটাই, কাজটা শেষ করা। এরপর তাঁরা যে অর্থ পাবেন, তা দিয়ে সংসার চলবে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু আবদুল মজিদ। তাঁর অর্থ দিয়ে চলবে লেখাপড়ার খরচ।

নীলফামারী সদরের সোনারায় ইউনিয়নের তিলাই জয়চণ্ডী গ্রামে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি পাটখেতে অন্য কৃষিশ্রমিকদের সঙ্গে নিড়ানির কাজ করছিলেন মজিদ। এ সময় মজিদ ও কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মজিদ সদরের সংগলসী ইউনিয়নের বড় সংগলসী কাচারি গ্রামের দিনমজুর বাবলু ইসলামের (৬০) ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের ছাত্র।

তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে মজিদ সবার ছোট। গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে এসে রোজা নিয়ে খেতে-খামারে কাজ করছেন মজিদ। তিনি ২০১৪ সালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান বিভাগে সোনারায় সংগলসী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০১৬ সালে একই বোর্ডের অধীনে সোনারায় সংগলসী ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৩ দশমিক ৯২ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে মজিদ সোনারায় সংগলসী ডিগ্রি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক শবনম নামের এক শিক্ষকের সহায়তায় মনোবিজ্ঞানে ভর্তি হন।

মজিদ বলেন, ‘আমি লেখাপড়া করে বিসিএস ক্যাডারে চাকরি করতে চাই। কিন্তু সে আশা পূরণ করতে অর্থই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বাবা আমার লেখাপড়ার জন্য ১৫ হাজার টাকা দেনা করেছেন। এখন কেউ টাকাও দিতে চাচ্ছেন না। গত মে মাসের মেস খরচ বাকি রেখে এসেছি, ২৯ জুন গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হবে। তখন দুই মাসের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে দিনমজুরির কাজ বেছে নিতে হয়েছে। এর আগেও স্কুল-কলেজ বন্ধের দিনগুলোতে দিনমজুরি করে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চাপ বেশি, দিনমজুরি করা যায় না। এখন বন্ধের কারণে করছি। বাবা আগের মতো কাজ করতে পারেন না। মা আগে মানুষের বাসায় কাজ করতেন, এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজে যান না। এখন নিজে কাজ না করলে আমার পড়শোনা চালাব কীভাবে।’

মজিদ বলেন, ‘রোজা নিয়ে রোদটা সহ্য হচ্ছে না। গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজটা শেষ না হলে টাকাও পাব না, তাই সহ্য করতে হচ্ছে।’ এ কাজ করে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই শ টাকা ভাগে পাচ্ছেন।

মজিদের বাবা বাবলু বলেন, ‘আমি নিজে লেখাপড়া জানি না, ছেলে নিজের চেষ্টায় পড়ছে। আগে এখানে নিজে কাজ করে ওর খরচ চালাত। এখন আমার পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব না। এ জন্য বলেছি না হলে তুই বাড়ি চলে আয়। আমার জমিজমা কিছুই নাই। পৌনে দুই শতক ভিটাটাই সম্বল। সেটা বেচলে আমরা থাকব কোথায়?’

সোনারায় সংগলসীডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ বলেন, ‘মজিদ খুব গরিব ঘরের সন্তান। মজিদ সৎ ও মেধাবী। মজিদ দিনমজুরি করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আশা করি তার ইচ্ছাশক্তির কারণে সে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।’