চাঁদপুরে পাঁচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে মেশিন নষ্ট

চাঁদপুর জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিন বছরের পর বছর ধরে অকেজো হয়ে আছে। এতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রোগীদের বেশি মূল্য দিয়ে বাইরের ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স-রে করাতে হয়।

আর এক্স-রে মেশিনগুলো চালানোর জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) না থাকায় এই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে অকেজো মেশিনগুলো সচল ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়ার জন্য বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাতটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে শাহরাস্তি ও মতলব (দক্ষিণ) উপজেলায় এক্স-রে মেশিন সচল রয়েছে। এ দুটিতে এক্স-রে মেশিন চালানোর জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্টও আছেন। অবশিষ্ট পাঁচটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেশিন সরবরাহের কয়েক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর মেশিনগুলো অকেজো বা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হয়। সাড়ে চার বছর চলার পর এটি অকেজো হয়ে যায়। তখন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শামিম আহমেদকে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়।

এ প্রসঙ্গে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী হাবিবুর রহমান বলেন, মেশিনটি নষ্ট হওয়ার পর গত বছরের প্রথম দিকে ঢাকা থেকে লোকজন এসে এটি সচল করে যান। মাসখানেক চলার পর আবার মেশিনটি অকেজো হয়ে যায়। হাবিবুর রহমান বলেন, আসলে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় মেশিনগুলো বেশির ভাগ সময় অকেজো থাকে। তিনি যুক্তি দেখান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকলে চেষ্টা-তদবির করে তিনি মেশিনটি ঠিক রাখতে পারতেন।

কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০০১ সালে এক্স-রে মেশিন বসানো হয়। কয়েক বছর চলার পর এটি অকেজো হয়ে যায়। চার বছর ধরে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আ. সালাম গতকাল দুপরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গত ৯ সেপ্টেম্বর এখানে যোগদান করেছি। চার বছর ধরে এক্স-রে মেশিন চালানোর জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। মেশিনখানা সচল না অচল, তা বোঝার উপায় নেই।’ এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি এক্স-রে করতে রোগীর খরচ হয় ৩০ টাকা। একই এক্স-রে করতে বাইরের ক্লিনিকে রোগীর কাছ থেকে ৩০০ টাকা নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় কমপ্লেক্সের সামনে ব্যাঙের ছাতার মতো ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠছে বলে জানান তিনি।

হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯৯৮ সালে এক্স-রে মেশিন দেওয়া হয়। কয়েক মাসের মাথায় তা অকেজো হয়ে যায়। ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০০৩ সালে এক্স-রে মেশিন দেওয়া হয়। কয়েক বছর চলার পর এটি অকেজো হয়ে যায়। বর্তমানে এখানকার এক্স-রে কক্ষে তালা ঝুলছে। মতলব (উত্তর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটিও বসানোর কয়েক মাস পর থেকে অকেজো।

সিভিল সার্জন মতিউর রহমান বলেন, অকেজো এক্স-রে মেশিনগুলো সংস্কারের মাধ্যমে সচল করা বা নতুন এক্স-রে মেশিন বসানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নিয়োগ দেওয়ার জন্যও তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।