শীতকষ্টে চর ও নদীপারের মানুষ

ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার নদীভাঙনের শিকার পদ্মাতীরবর্তী কয়েক হাজার দরিদ্র মানুষ। একইভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষেরা।
নদীভাঙনের শিকার কয়েক শ পরিবার নিয়ে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ক্যানেলঘাট এলাকার পশ্চিমে গড়ে উঠেছে নুরু মণ্ডলেরপাড়া। ওই পাড়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনের শিকার হয়ে ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম থেকে প্রায় ৬০০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
গতকাল রোববার সরেজমিনে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মণ্ডল এলাকার একটি বিশাল খাদ বালু দিয়ে ভরাট করে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত অনেকেই টাকার অভাবে ঘরও তুলতে পারেনি। তীব্র শীতে অনেক সময় মাঝরাতে তাদের ভাঙা ঘরের চাল চুইয়ে কুয়াশার পানি পড়ে কাঁথা-বালিশ ভিজে যায়।
চেয়ারম্যান বলেন, তাঁর ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ পদ্মাতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা। প্রায় সবাই নদীভাঙনের শিকার। এদের অধিকাংশই ঘাটে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসার চালায়। বর্ষা শেষ হওয়ার পর এবার শীত তাদের তীব্র দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেরিঘাট এলাকা, শাহাদত মেম্বারপাড়া, ছিদ্দিক কাজীরপাড়া, ছাত্তার মেম্বারপাড়া, নতুনপাড়া ও নুরু মণ্ডলপাড়ার কমপক্ষে দুই হাজার পরিবার তীব্র শীতে কষ্ট করছে। এদের সাহায্য প্রয়োজন।
উজানচর ইউপির চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, তাঁর ইউনিয়নের চর কর্ণেশনা, আংকের শেখেরপাড়া, মজলিশপুর, মহিদাপুর, দেবিপুর, কোনঠাদিয়াসহ কয়েকটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হতদরিদ্র। শীতে তারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ ঘোষ বলেন, উপজেলার সব ইউনিয়নেই শীতে কষ্ট করছে হতদরিদ্র কয়েক হাজার মানুষ। যে পরিমাণ সাহায্য পাওয়া গেছে, তা অপ্রতুল।
এদিকে শীতবস্ত্রের অভাবে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন নয়টি চর নিয়ে গঠিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ৪০০টি দরিদ্র পরিবার চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এই চরে যেতে তেঁতুলিয়া নদী পার হতে হয়। চরের জমিতে কৃষিকাজ করে এবং নদীতে মাছ ধরে এই ইউনিয়নের বাসিন্দারা সংসার চালায়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এখানকার মানুষেরা অত্যন্ত দরিদ্র। কিন্তু এবারের শীতে এখানে কেউ শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসেনি।
ইউনিয়নের আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রব মিয়া বলেন, এখানকার অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা শীতবস্ত্রের অভাবে দুই দিন ধরে বিদ্যালয়ে আসছে না।
দীর্ঘদিন থেকে শৌলা গ্রামের বগী খালে নৌকায় বাস করে ৫০টি জেলে পরিবার। সেখানকার বাসিন্দা ডুসু সরদার (৭৫)। তিনি বলেন, ‘নদীভাঙনে জায়গাজমি সব হারাইয়া বউ-পোলাপাইন লইয়া নৌকায় থাহি। খুব শীত। হেইয়ার লইগা গত দুই দিন নদীতে মাছ ধরতে যাইতে পারি নাই। খুব কষ্টে আছি।’ জেলেরা জানান, জেলে হিসেবে সরকারিভাবে কোনো সহায়তা তাঁদের ভাগ্যে জোটে না। তীব্র শীতে দুর্বিষহ জীবন কাটলেও কেউ তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এস এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সরকারিভাবে কিছু কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে জেলা শহর থেকে তা আনা সম্ভব হয়নি। এক-দুই দিনের মধ্যে সেগুলো এনে হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।