চার জেলায় আরও মন্দির বাড়িতে আগুন, হামলা

একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ধারাবাহিকতায় দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ এখনো চলছে। গত শনিবার নেত্রকোনা ও পিরোজপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি মন্দির, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একটি বাড়ি, বগুড়ার নন্দীগ্রামে একটি পরিবারের খড়ের গাদায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকেরা এসব ঘটনার পেছনে ‘দুর্বৃত্তদের’ দায়ী করছেন।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার কালিয়ারা-গাবরাগাতি ইউনিয়নের বাদে-দুধকোড়া গ্রামে চন্দন মেম্বারের বাড়ির কালীমন্দিরে শনিবার রাতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়। এতে কালী ও শিব প্রতিমা আংশিক পুড়ে গেছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। পথচারী ও মন্দিরের আশপাশের লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম কাউসার আহমেদ জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ জানায়, দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম পশারীবুনীয়া ঢালী বাড়ির দুর্গামন্দিরেও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে বহু বছরের পুরোনো মন্দিরটি অনেকটাই পুড়ে গেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শিশির চন্দ্র বড়াল জানান, শনিবার রাতে মন্দিরের পাশের বাসিন্দা লাবণ্য রানী মিস্ত্রি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে বের হন। এ সময় তিনি মন্দিরে আগুন জ্বলতে দেখে চিৎকার দেন। স্থানীয় লোকজন এসে আধা ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ভান্ডারিয়া থানার ওসি মো. মতিউর রহমান বলেন, দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে মন্দিরের অবকাঠামো পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা (পশ্চিম) ইউনিয়নের ধড্ডা মালি বাড়ির নিরঞ্জন চন্দ্র মালির বাড়ির একটি ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিরঞ্জনের ভাই চন্দন চন্দ্র মালি বলেন, তাঁর ছোট ভাই নিরঞ্জন সপরিবারে নোয়াখালী থাকেন। ওই রাতে দুর্বৃত্তরা নিরঞ্জনের একটি ঘর পুড়িয়ে দেয়। বাড়ির আরও পাঁটটি ঘরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রতিবেশী সফি উল্যাহ জানান, রাতে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে এসে তিনি ঘরটিতে আগুন জ্বলতে দেখেন। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নেভান।
হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামছুল আলম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।’
জেলা পুলিশ সুপার আমির জাফর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মো. আবু হানিফ ও হাজীগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ্ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মো. শাহ্ আলম বলেন, দুর্বৃত্তরা নিরঞ্জনের পরিত্যক্ত একটি বসতঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় নিরঞ্জন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
খড়ের গাদায় আগুন: বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় একটি হিন্দু পরিবারের খড়ের গাদায় আগুন এবং একটি অগভীর নলকূপ লুট করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরপরই এ উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকটি খড়ের গাদা এবং একটি মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় লোকজন জানান, উপজেলার সদর ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ঠেকাতে কয়েক দিন ধরে হিন্দু-মুসলমান একজোট হয়ে রাতে পাহারা দিচ্ছিল। শনিবার রাত তিনটার দিকে পাহারা দলের সদস্যরা ঘুমিয়ে পড়েন। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা গ্রামের গৌতম চন্দ্রের বাড়ির উঠানে দুটি খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর দুর্বৃত্তরা পঙ্কজ চন্দ্রের বাড়িসংলগ্ন শ্যালো মেশিন ঘর থেকে একটি অগভীর নলকূপ লুট করে। নন্দীগ্রাম থানার ওসি শাহজাহান আলী বলেন, দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নেত্রকোনা, পিরোজপুর, বগুড়া, ও হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি]