ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা, তবু বেজায় ভিড় মার্কেটে

মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষের ভিড়ে যানজটের শহর কিছুটা ফাঁকা হবে। একটু স্বস্তিতে কেনাকাটার আশায় রাজধানীবাসীর অনেকেই বাসা থেকে বেরিয়েছেন। ঢাকা ফাঁকা হতে থাকলেও শপিং মলগুলোতে কিন্তু ভিড় কম নয়।

রোববার চাঁদ দেখা দিলে সোমবার ঈদ। হাতে একদম সময় নেই। ভিড়বাট্টা ঠেলার ভয়ে ফাহিমা খাতুন রোজার শেষ শুক্রবারের আশায় ছিলেন। মিরপুর ১০ নম্বরের শাহআলী প্লাজায় এসেছেন ছেলের জুতা কেনার জন্য। কিন্তু বেলা ১১টায় এসেই দেখেন বেশ ভিড়। তিনি বলেন, ‘চাকরি করি বলে তেমন সময় পাই না। আজকে ভাবছি, মানুষ সব চলে যাবে, মার্কেট ফাঁকা পাব। কিন্তু এসেই দেখি এত ভিড়!’

রাজধানীর নিউমার্কেটে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় ছিল। ছবিটি বিকেলে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম
রাজধানীর নিউমার্কেটে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় ছিল। ছবিটি বিকেলে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম

মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করলেও মার্কেটের চিত্র ভিন্ন। সকাল থেকেই মানুষ ভিড়তে শুরু করেছে। বিক্রেতারাও স্বস্তি পাচ্ছেন। শাহআলী মার্কেটের নিচতলায় ‘রেক্স গ্যালারি’ নামের একটি জুতার দোকানে বেশ কয়েকজন ক্রেতা জুতা পছন্দ করছেন। বিক্রেতারা ভীষণ ব্যস্ত। মো. আসিফ নামের একজন বিক্রেতা বলেন, ‘মনে হয় সারা রোজায় যা না বেচছি, তা আজকে-কালকে দুই দিনে তা বেচা হইব।’
সায়েন্স ল্যাবে পাঞ্জাবির দোকানগুলোয় ক্রেতাদের সমাগম অনেক। শাহীন খান বাবা ও ভাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এ কয়দিন সময় পাইনি। কাল বাড়ি যাব। শপিংয়ের জন্যই একদিন পরে যাচ্ছি।’ সায়েন্সলাব থেকে নিউমার্কেটের দিকে ভিড় ঠেলে এগোতে হচ্ছে।

পোশাক কিনতে সেজেগুজে এসেছে এই শিশুটিও। ছবিটি শুক্রবার নিউমার্কেট থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম
পোশাক কিনতে সেজেগুজে এসেছে এই শিশুটিও। ছবিটি শুক্রবার নিউমার্কেট থেকে তোলা। ছবি: আবদুস সালাম

গাউছিয়া, চাঁদনী চকে ঢুকতে রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি অবস্থা। এ মার্কেটে বেশ কয়েকজনকে দেখা গেল বাড়ি যাওয়ার পথে মার্কেটে একটু ঢুঁ দিতে। লামিয়া ও তাঁর মা গাউছিয়াতে দুটি ট্রলির ওপরে বসে আছেন। অপেক্ষা ভাবির জন্য। লামিয়া বলেন, বেলা তিনটায় বাস। তাঁর ভাবির কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল। তাই ব্যাগ-প্যাকসহ একবারেই চলে আসা। লামিয়াদের মতো অনেকেই যাত্রাপথেও শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন।
নিউমার্কেটের বৈশাখী ফ্যাশনের বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘এইবার বেচা কিনি বেশি সুবিধার হয় নাই। এখন এই শেষ দু-তিন দিনে যা বেচা যায়।’ অনেকেই ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন, তাহলে এখনকার ক্রেতা কারা জানতে চাইলে বলেন, ঢাকায় ঈদ করা মানুষেরও সংখ্যাও কম না। এ ছাড়া সব গার্মেন্টস ছুটি না হওয়ায় সে ক্রেতারাও আসছেন।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের মেট্রো শপিং মলের গয়না ও জুতার দোকানগুলোতে তুলনামূলক ভিড় বেশি। ‘দুল’ নামের একটি গয়নার দোকানে কানের দুল পছন্দ করছিলেন সুজানা হক। প্রতিদিনই শপিংয়ে বের হন। আজকে গয়না আর জুতা কিনবেন। তাঁর শপিং চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত। তবে বললেন, শেষ দিকে এসে বিক্রেতারা পণ্যের দাম বেশি রাখছেন।

নগরবাসী সেরে নিচ্ছেন শেষ মুহূর্তের ঈদের কেনাকাটা। ছবি: আবদুস সালাম
নগরবাসী সেরে নিচ্ছেন শেষ মুহূর্তের ঈদের কেনাকাটা। ছবি: আবদুস সালাম

কায়সার আহমেদ পুরো পরিবার নিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে এসেছেন। পুরো রোজায় ঈদের কেনাকাটার জন্য বের হননি। রাস্তাঘাটের খোঁজ নিয়ে একটু ফাঁকা ভেবে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘রাস্তা তো ফাঁকাই পেলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি সেই একই ভিড়। ভাবছিলাম, গতকাল থেকে মানুষ যাওয়া শুরু হইছে, আজকে কম থাকবে।’ একটু হেসে নিজেই বললেন, স্বস্তিতে কেনার আশায় হয়তো অনেকেই তাঁর মতো ভেবে বের হয়েছেন বলে ভিড় হয়েছে।
ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। কেউ ঘরে ফেরার পথে। আবার অনেকেই ফাঁকা ঢাকায় কেনাকাটার জন্য ব্যস্ত। বিক্রেতারা বলছেন, মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেলেও মার্কেটের ভিড় কমবে না। চাঁদরাত পর্যন্ত এর পরিমাণ আরও বাড়বে।