মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে নুরুল ইসলামের মৃত্যু হয়

মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতের কারণে এলিফ্যান্ট রোডের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এই হত্যাকাণ্ডে সাবেক কাস্টমস কমিশনার, কবি ও গীতিকার শাহাবুদ্দীন নাগরী প্ররোচনা দিয়েছেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন আগে নুরুল ইসলামের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ হাতে পেয়েছে। প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ বলা হয়েছে মস্তিষ্কে আঘাতজনিত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নুরুল ইসলামের ময়নাতদন্ত হয়। তিনি এলিফ্যান্ট রোডের একটি বহুতল ভবনে থাকতেন। ওই ভাড়া বাসা থেকে গত ১৪ এপ্রিল তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের সময় তাঁর শরীরের তিন ভাগের দুই ভাগ খাটের নিচে এবং এক ভাগ বাইরে ও মুখে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। মেঝেতেও রক্তের দাগ ছিল। ১৪ এপ্রিল রাতে নুরুল ইসলামের বোন শাহানা রহমান এ ব্যাপারে নিউমার্কেট থানায় দুজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তাঁরা হলেন নুরুল ইসলামের স্ত্রী নুরানী আক্তার ও সাবেক কাস্টমস কমিশনার শাহাবুদ্দীন নাগরী। শাহানা তাঁর ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত এবং নুরানী আক্তার ও শাহাবুদ্দীন নাগরীর যোগসাজশে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত, হত্যার সময় শাহাবুদ্দীন নাগরী ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তবে হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত কি না এবং এতে শাহাবুদ্দীন নাগরীর প্ররোচনা ছিল কি না, পুলিশ এখন তা খতিয়ে দেখছে।

শাহানা রহমানের দাবি, নুরুল ইসলাম জানতেন না যে তাঁর স্ত্রী নুরানী আক্তারের সঙ্গে সাবেক কাস্টমস কমিশনার শাহাবুদ্দীন নাগরীর বন্ধুত্ব ছিল। গত ১২ এপ্রিল প্রথম নুরুল ইসলাম ওই সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে পারেন। এ নিয়ে শাহাবুদ্দীন নাগরীর সঙ্গে নুরুল ইসলাম বিবাদে জড়ান। পরদিন বিষয়টি নিয়ে নুরানীর সঙ্গেও তাঁর (নুরুল) ঝগড়াঝাঁটি হয়। ১৩ এপ্রিল সকালে নুরুল ইসলাম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান, রাতে ফেরেন। শাহানা রহমান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শুনেছেন ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪ এপ্রিল সকালে নুরুল ইসলাম স্ত্রী নুরানীকে থাপড় মেরেছিলেন। তখন নুরানী তাঁকে ধাক্কা দিলে তিনি (নুরুল ইসলাম) ড্রেসিং টেবিলে বাড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যান। এর পরপরই তিনি মারা যান।

পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের দিন নুরানী আক্তারের সঙ্গে নুরুল ইসলামের পাসপোর্ট করা নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। নুরানী আক্তার তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট করতে চাইছিলেন। তিনি ভারত থেকে কাপড় এনে ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু নুরুল ইসলাম পাসপোর্ট করায় স্ত্রীকে সহযোগিতা করছিলেন না। হত্যাকাণ্ডের দিন সকালে এ নিয়েই দুজনের কথা-কাটাকাটি হয়। নুরুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর নুরানী আক্তার একাই লাশ খাটের নিচে লোকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুরোটা ভেতরে ঢোকানোর আগেই শাহাবুদ্দীন নাগরী চলে আসেন। হত্যাকাণ্ডের দিন ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে শাহাবুদ্দীন নাগরীকে ওই বাসায় ঢুকতে এবং বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে।

পুলিশ আরও বলেছে, নুরানী আক্তারের সঙ্গে শাহাবুদ্দীন নাগরীর সম্পর্কের কথা নুরুল ইসলাম ১২ এপ্রিল প্রথম জেনেছেন, এই তথ্য ঠিক নয়। নুরুল ইসলাম আগে থেকেই সব কিছু জানতেন। বছর দেড়েক আগে নুরুল ইসলাম বাগেরহাটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। হত্যাকাণ্ডের মাস তিনেক আগে তিনি আসেন এবং তাঁরা এলিফ্যান্ট রোডের বাসাটিতে উঠেছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তিনি বাগেরহাটেই ছিলেন। সে সময় নুরানী তাঁকে একবার দেখতে গিয়েছিলেন। সাত-আট বছর আগে বিয়ে হলেও নুরানী শ্বশুরবাড়ি যেতেন না।