তিন বছরেও ক্ষতিপূরণ মেলেনি

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার তিন বছর পরও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি ওই এলাকার পেশা হারানো শ্রমজীবী মানুষজন। সরকার ক্ষতিপূরণের টাকা বরাদ্দ করলেও এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাই তৈরি হয়নি। 

জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪১৪ একর জমি। অধিকৃত জমি ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জমি অধিগ্রহণ করার সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লবণ, চিংড়ি, কাঁকড়ার খামারসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ২১ শ্রেণির পেশার লোকজনকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি পুনর্বাসন করা হবে। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিডেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য ইতিমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গৃহহারা পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য ইতিমধ্যে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই জমিতে আবাসনের জন্য মাটি ভরাটের কাজ চলছে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’।

ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সংখ্যা কত এ নিয়ে রয়ে গেছে মতভেদ। বেসরকারি সংস্থা সুশীলনের মাঠ জরিপে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা পাওয়া গেছে ১ হাজার ৯২৮ জন। এ প্রসঙ্গে সুশীলনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, মাঠপর্যায়ে জরিপ করে ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন লবণ চাষি ও জমির মালিক। তবে অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষজনের তালিকা এখনো করা শুরু হয়নি। 

তবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি হবে বলে মনে করেন মাতারবাড়ীর জনপ্রতিনিধিরা। এ প্রসঙ্গে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘ইউনিয়নের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরেকটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য এখানকার আরও ১২০০ একর জমি সরকার নিয়েছে। এর ফলে ৩৫ হাজার শ্রমজীবী মানুষ পেশা হারিয়েছেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইউনিয়নের সাইরার ডেইল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের পাশে ৩০-৪০টি পরিবার ঝুপড়িঘর তৈরি করে বসতি করছেন। অধিকাংশ ঘর বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে তৈরি। 

বাঁধের ঢালুতে তৈরি একটি ঝুপড়িতে থাকছেন বৃদ্ধা মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে ১১ মাস আগে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভেতর থেকে তাঁদের বাড়িটি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হয়নি। পবিত্র রোজার মাস দুঃখ-কষ্টে পার করেছি। ঈদও কেটেছে অভাব অনটনে। এ পর্যন্ত কেউ খোঁজও নেয়নি।

সাইরার ডেইল এলাকার লবণচাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, অধিকৃত জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলো ভাড়া বাসায়, আবার কেউ পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে বেড়িবাঁধের ঢালুতে ঝুপড়িঘর তৈরি করে বসতি করছেন। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে প্রায় সব ঘর ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুনর্বাসনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।