শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

নেত্রকোনা শহরে শিশু গৃহকর্মীকে (৮) নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল রোববার থানায় মামলা হয়েছে। গৃহকর্তা টিটু মিয়া (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তারকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

টিটু মিয়ার বাড়ি শহরের কুরপাড় এলাকায়। সাত মাস আগে ওই বাড়িতে গৃহকর্মী স্বর্ণামণি কাজ শুরু করে। গত শুক্রবার নির্যাতনের ফলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্বর্ণামণি নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় বাসিন্দা, শিশুটির পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাজে সামান্য ত্রুটি হলেই স্বর্ণামণিকে বেধড়ক পেটানো হতো। টাকা চুরির অভিযোগ এনে শুক্রবার রাতে তাকে মারধর করে টিটু মিয়া, তাঁর স্ত্রী নাসরিন ও ছেলে নয়েল মিয়া (২০)। একপর্যায়ে স্বর্ণামণি অচেতন হয়ে পড়ে। শনিবার সকালে তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। দুপুরে পরিবারের লোকজন তাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। গতকাল দুপুরে শিশুটির চাচা বাদশা মিয়া বাদী হয়ে টিটু মিয়া, তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার ও ছেলে নয়েল মিয়াকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। বেলা আড়াইটার দিকে শহরে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে টিটু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নাসরিন আক্তারকে। নয়েল মিয়া পলাতক।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, স্বর্ণামণি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সে বলে, ‘টাকা চুরির মিথ্যা অভিযোগ এনে বাসার মালিক প্রথমে আমাকে লাঠি দিয়ে মারধর করে। পরে তাঁর ছেলে নয়েল আমার হাত-পা বেঁধে বেল্ট দিয়ে পেটাতে থাকে। নাসরিন আন্টি আমার মুখ চেপে ধরে। তাঁরা বলে, “তোকে মেরে পানির ট্যাংকিতে ফেলে দিব।” আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আর কিছু বলতে পারি না।’ শিশুটির বড় বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে মা ফুলেছা বেগম মারা যান। বাবা রফিকুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। অভাব সইতে না পেরে বোনটিকে মানুষের বাসায় কাজে দিয়েছিলাম। তারা এভাবে আমার ছোট বোনটিকে নির্যাতন করল! আমি তাদের বিচার চাই।’

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মো. নজরুল ইসলাম ফকির বলেন, শিশুটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে শঙ্কামুক্ত। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।

নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি মো. আবু তাহের দেওয়ান বলেন, বাসার মালিক ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের ছেলেকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।