অতিরিক্ত বাস ভাড়ার ফাঁদে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা

ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীদের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার ঈদের ষষ্ঠ দিনে বরিশাল ও বরগুনা থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী বাসগুলোর যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়ার ফাঁদে পড়তে হয়।

বরগুনা-ঢাকা যাত্রাপথের বাসগুলোতে অতিরিক্ত ১০০ থেকে ২৫০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। আর বরিশাল থেকে ঢাকাগামী বাসে অতিরিক্ত ৬০ থেকে ৩৫০ টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া বরিশাল-কাওড়াকান্দি পথে অতিরিক্ত ৭০ টাকা আদায় করা হয়।

বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনাল থেকে বিভিন্ন যাত্রাপথের বেশ কয়েকজন যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল থেকে কাঁঠালবাড়ি (কাওড়াকান্দি) চলাচলকারী বাসগুলোতে আগে ভাড়া ছিল ১৮০ টাকা। এখন আদায় করা হচ্ছে ২৫০ টাকা।

বরিশাল-ঢাকায় চলাচলকারী হানিফ, সাকুরা, গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাসগুলোতে আগে ৪৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হতো। এখন ৫১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সাকুরা পরিবহনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে (এসি) আগে ৬৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও এখন অতিরিক্ত ৩৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক রানা তালুকদার বলেন, ‘ঈদের সময় আসা এবং যাওয়ার সময় এক পাশ থেকে যাত্রী হয়, আরেক পাশ থেকে যাত্রী ছাড়াই খালি গাড়ি চালিয়ে আসতে হয়। এ কারণে এই সময় অতিরিক্ত ভাড়া না নিলে লোকসান হয়। এ জন্য ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বাড়তি ভাড়া নিলেও তা বিআরটিএর (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) নির্ধারণ করে দেওয়া ভাড়া ৫১২ টাকার চেয়ে বেশি নয়।’

সাকুরা পরিবহনের ব্যবস্থাপক মো. শওকত বলেন, সরকার-নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

 বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসগুলোও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। বিআরটিসির এসি বাসে বরিশাল থেকে কাঁঠালবাড়ি (কাওড়াকান্দি) যাত্রাপথে চলাচলকারী বাসগুলোতে আগে ২৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও এখন ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

বিআরটিসির ডিপোর ব্যবস্থাপক জেড এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘এসি গাড়িতে এই পথে নির্ধারিত ভাড়া ৩৩৩ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে ২৫০ টাকা নেওয়া হলেও এখন একদিক থেকে যাত্রী কম হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।’

 বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, ‘যাত্রীদের যাতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে না হয়, সে জন্য আমরা প্রতিটি কাউন্টারে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে দিয়েছি।’

এদিকে বরগুনা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৪০টি বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসব বাসের যাত্রীদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এরপরও যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। নির্ধারিত সময়ের ৫-৬ ঘণ্টা পর তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে।

কয়েকজন যাত্রী বলেন, বরগুনা থেকে ঢাকায় ঈদের আগে শাকের পরিবহনের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা, এখন তা ৮০০ টাকা। ইলিশ পরিবহনে আগে ৫০০ টাকা আদায় করা হতো, এখন তা ৭৫০ টাকা। সাকুরা পরিবহনে আগে বরগুনা থেকে সায়েদাবাদ ৫০০ টাকা আদায় করা হতো, এখন ৬০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বরগুনা-ঢাকার গাবতলী যাত্রাপথে আগে ৫৫০ টাকা ভাড়ার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা। সোনারতরী পরিবহন আগে ৫৫০ টাকা ভাড়া আদায় করত, এখন নিচ্ছে ৭৫০ টাকা, হানিফ পরিবহনের ভাড়া আগে ছিল ৫৫০ টাকা এখন আদায় করা হচ্ছে ৭৫০ টাকা।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ইলিশ পরিবহনের একটি বাস সকাল সাতটার দিকে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ৬ ঘণ্টা পর বেলা একটার দিকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। শাকের পরিবহনের একটি বাস সকাল সাতটার দিকে বরগুনা থেকে ঢাকায় ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বেলা একটার দিকেও বাসটি বরগুনায় এসে পৌঁছায়নি। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

ইলিশ পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম বলেন, যানজট ও রাস্তা খারাপ থাকায় সময়মতো গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। তিনি বলেন, ‘ঈদের বিশেষ সার্ভিসের জন্য বাস কোম্পানিগুলো ভাড়া বৃদ্ধি করেছে, তাই আমরা ভাড়া বেশি নিচ্ছি।’

বিআরটিএর বরিশাল কার্যালয়ের উপপরিচালক শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠেকাতে তাঁদের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে তদারিক করা হয়। এরপরও বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।