স্কুলের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেন আ.লীগ নেতারা?

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চাঁদা না দেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সভা ডাকলে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এতে সভাটি পণ্ড হয়ে যায়।

গতকাল সোমবার উপজেলার বলিয়ারদী ইউনিয়নের সাপলেঞ্জা গ্রামে অবস্থিত আবদুল মান্নান স্বপন উচ্চবিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বলিয়ারদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোবারক ভূইয়া, বর্তমান সহসভাপতি শাহ আলম ও ইউনিয়নটির ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সাইফুল ভূইয়া সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাপলেঞ্জা গ্রামের আবদুল মান্নান নিজের জায়গায় ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি নন-এমপিওভুক্ত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাতা নিজেই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৯২। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বিদ্যালয় পরিচালনার যাবতীয় ব্যয়ভার প্রতিষ্ঠাতা নিজেই নির্বাহ করে থাকেন। এত দিন বিদ্যালয়টিতে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ ছিল। কিছুদিন আগে গ্রামটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (পিডিবি) অধীনে আসে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, মোবারক ভূইয়া, শাহ আলম ও সাইফুল ভূইয়া এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা না দেওয়া হলে তাঁরা কাউকে সংযোগ নিতে দেন না। গত শনিবার আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয়ের লাইনম্যান সোহাগ মিয়া এসে বিদ্যালয়টিতে নতুন সংযোগ দিয়ে যান। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের পাশ কাটিয়ে সংযোগ নেওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা প্রতিষ্ঠাতার কাছে চাঁদা দাবি করেন। প্রতিষ্ঠাতা চাঁদা দিতে রাজি হননি। এই অবস্থায় রোববার বিকেলে ওই তিন নেতা নিজে এসে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তখন বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছিল।

প্রতিকার চেয়ে প্রতিষ্ঠাতা রোববার রাতেই ক্ষমতাসীন দলের ওই তিন নেতার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেন। একই সঙ্গে তিনি গতকাল দুপুরে বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবাদ সভা আহ্বান করেন। গতকাল সকালে সভার বিষয়ে মাইকযোগে প্রচারণা চালানোর সময় ক্ষমতাসীন দলের অনুগত কর্মীরা এসে মাইক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এসে মিটারটিও খুলে নিয়ে যান।

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, ‘অন্য কোনো কারণ নেই। আমার অপরাধ কথামতো চাঁদা না দেওয়া। আমার ধারণা ছিল তাঁরা বিদ্যালয়ের জন্য ছাড় দেবেন। কিন্তু বিদ্যালয়ও তাঁদের আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি। একই সিন্ডিকেটের হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করায় প্রতিবাদ সভাটিও করা যায়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় বিদ্যালয়টিতে স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।’

সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও চাঁদা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক ভূইয়া বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা-তদবিরে গ্রামে পিডিবির বিদ্যুৎ এসেছে। ট্রান্সফরমার এনেছি। বিদ্যালয়ে সংযোগ নেওয়ার আগে আমাদের জানানো উচিত ছিল।’ এ বিষয়ে অপর নেতা শাহ আলম বলেন, অস্বীকার করা যাবে না বিদ্যুৎ আনতে কিছু টাকাপয়সা খরচ হয়েছে। সুতরাং সবার সহযোগিতায় ওই ব্যয় নির্বাহ করার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সৌজন্যতাটুকু করা হয়নি। তবে চক্রের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে সংযোগ বাবদ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

মিটার খুলে আনার বিষয়ে বাজিতপুর উপজেলার বিদ্যুৎ বিভাগের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়টিতে সংযোগের অনুমোদন ছিল না। অনুমোদনের আগেই সংযোগ নিয়ে নেওয়ায় মিটার খুলে আনা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে লাইনম্যান সোহাগ মিয়া বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করা আছে। আজকের মধ্যে অনুমোদন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। যেহেতু এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সে কারণে জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে দুই দিন আগেই সংযোগটি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সামা মোহাম্মদ ইকবাল হায়াত বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। মাইক জব্দ করার বিষয়ে বলেন, ‘কয়েকজন সম্মানিত লোকের নাম উল্লেখ করে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মাইকযোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছিল। বিষয়টি দৃষ্টিকটু লাগায় গ্রামের কিছু মানুষ মাইক আটকে আমাদের কাছে তুলে দেন।’