নালা নেই, একটু বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার

রংপুরের তারাগঞ্জের ইকরচালী বাজারে পানিনিষ্কাশনের নালা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারের অলিগলি, রাস্তায় কাদাপানি জমে আছে। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
রংপুরের তারাগঞ্জের ইকরচালী বাজারে পানিনিষ্কাশনের নালা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারের অলিগলি, রাস্তায় কাদাপানি জমে আছে। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো

‘এ মতন করি আর কত দিন কাদাপানিত বসি কষ্ট করি ব্যবসা করমো। নির্বাচনের সময় চেয়ারম্যান কছিলো ভোট দেও, সমস্যা নাই, এটে পাকা নালা বানে দেমো। কিন্তু এলাও নালা কোনা পাইনো না। এটে কোনো নালা বানাতে আরও কত দিন নাগবে বাহে?’

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী মহুবার রহমান গত রোববার আক্ষেপ করেএসব কথা বলেন। শুধু মহুবার নন, ইকরচালী বাজারে নালার ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে বাজারের অলিগলি ও রাস্তায় কাদাপানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে বাজারের সবাই ক্ষুব্ধ।

বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, তারাগঞ্জ হাটের পর সবচেয়ে বড় হাট হচ্ছে ইকরচালী। দীর্ঘদিনেও এ হাটে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। পথচারী ও হাটুরেসহ জনসাধারণকে সামান্য বৃষ্টিতে বাজারের অলিগলিতে জমে যাওয়া কাদাপানি দিয়েই যাতায়াত করতে হয়।

গত রোববার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পানিনিষ্কাশনের কোনো নালা নেই। বাজারের অলিগলিগুলো কাদাপানিতে একাকার। মাছের বাজার বসেছে খোলা জায়গায় নোংরা পরিবেশে। হাটটির মাংস বাজারের মাটি তামাটে লাল হয়ে গেছে। নর্দমাগুলো রক্তপানিতে একাকার। পচা রক্ত ও নোংরা পানি-মাটির দুর্গন্ধে ক্রেতা-বিক্রেতা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এখানে সপ্তাহে তিন দিন—মঙ্গল, বৃহস্পতি ও রোববার হাট বসে।

বাজার করতে আসা সরকারপাড়া গ্রামের হাসু সরকার বলেন, ‘১০ বছর ধরে এ বাজারে কোনো উন্নয়ন নেই। বাজার সারা বছরই কাদাপানিতে ভরপুর থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলে পুরো বাজারে পানি জমে।’

কাপড় ব্যবসায়ী জুলফিকার হোসেন বলেন, ‘সরকার ইজারাদারের মাধ্যমে হামারটে খালি টোল নেয়, কিন্তুক হাটের কোনো উন্নয়ন করে না। এটে একনা নালা না বানায় হাটের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় হামার দুর্গন্ধে ভালোভাবে ব্যবসা করির পাইছি না।’

ইকরচালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জিয়াউর রহমান বলেন, বাজারে পানিনিষ্কাশনের জন্য নালার ব্যবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টিতে বাজারের বিভিন্ন অলিগলিতে হাঁটুসমান কাদাপানি জমে। বিশেষ করে বর্ষায় প্রকট আকার ধারণ করে। জনসাধারণের চলাফেরা করতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সবজিবিক্রেতা নয়া মিয়া বলেন, ‘হামার কোনো দাবি নাই। বাজারটাত একটা নালা চাই। কাদাপানির জন্য ব্যবসা করিবার পাই না।’

মাংসবিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি এলে মাংস শেডের টিনের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। মাংস শেডের প্রায় পিলারগুলোর পলেস্টার খসে পড়ে। এখানে বসে মাংস বেঁচতে ভয় লাগে। মনে হয় এই বুঝি ঘর ভেঙে মাথায় পড়ে।’

ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে নালা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে অলিগলিতে কাদাপানি জমে। এতে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তাঁদের কষ্টের কথা আমাকে বলেছেন। এক মাস আগে সরেজমিনে বাজারটির দুরবস্থা দেখে এসে সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা করছি।’