অবৈধ ঘের উচ্ছেদ না করে তিতাস খনন

বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিতাস নদে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ঘের। গতকাল উপজেলার কালিকাপুর এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিতাস নদে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ঘের। গতকাল উপজেলার কালিকাপুর এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিতাস নদে গড়ে তোলা অবৈধ ঘের উচ্ছেদ না করে খননকাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এপ্রিল মাস থেকে এই খননকাজ করছে। ঘের উচ্ছেদ না করে নদ খনন করলে তা কোনো কাজে আসবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।

রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও নদে মাছের ঘের করেছেন। ঘেরমালিকেরা বলছেন, উপজেলা মৎস্য কার্যালয় তাঁদের ঘের করার বিষয়টি জানেন।

উপজেলার ফরদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হালিম বলেন, আনন্দবাজার, ফরদাবাদ, পূর্বহাটি, ঝুনারচর এলাকায় নদে ঘেরের কারণে সারা বছর কচুরিপানা জমে থাকে। গন্ধে টেকা দায়। দেশি মাছও আগের মতো নেই। এসব এলাকায় ঘের উচ্ছেদ না করে নদ খনন করলে কোনো কাজে আসবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকার সঙ্গে নৌপথ সচল রাখতে এবং নদের দুই পাড়ের কৃষিজমিতে সেচ ও মৎস্য চাষের জন্য পর্যায়ক্রমে তিতাস নদের ৪৫ কিলোমিটার খনন করা হবে। গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে হোমনা-বাঞ্ছারামপুর-সলিমগঞ্জ এবং হোমনা-রামকৃষ্ণপুর-নবীনগর নৌপথের খননকাজ শুরু হয়।

তিতাস নদের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, নদে অন্তত ৩০০ অবৈধ ঘের রয়েছে।

সরেজমিনে তিতাস নদের রাধানগর, কালিকাপুর, ছলিমাবাদ, সাহেবনগর, আছাদনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদের অনেক জায়গায় ঘের দেওয়া রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার কমলপুর, পাইকারচর ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ঘাগুটিয়া ও চণ্ডীপুর এলাকায় ড্রেজিং শুরু হলেও এসব অঞ্চলে প্রায় ১৫টি ঘের রেখে খননকাজ করেছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (খনন বিভাগ) সুলতান আহমেদ খান বলেন, কয়েক বছর আগে ঘের উচ্ছেদ করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময় তারা সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেনি। নদের খনন শুরু হয়ে গেলেও ঘের উচ্ছেদ করতে শিগগিরই চিঠি দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি আবার জানানো হবে।

সাহেবনগর গ্রামের ঘেরমালিক মোস্তফা মিয়া বলেন, তিনি ২৮ বছর ধরে নদে ঘের করেন। তাঁর মতো আরও অনেকে আছেন। নদে ঘের দিতে স্থানীয় ব্যক্তিরা বাধা দিলে তিনি মৎস্য কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন। এ জন্য দুই-তিন বছর ধরে তাঁদের আর কেউ কিছু বলে না।

উপজেলা যুবলীগের সহসম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নদীতে খেও (ঘের) দেওনে কেউ কিছু কয় নাই কখনো। আমার তো একটা খেও। নদী কাটতাছে এখন শুনেছি, কিন্তু খেও সরানোর জন্য কেউ কিছু বলে নাই আমাদের।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শুভ্র সরকার বলেন, তিতাস নদে অবৈধভাবে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করায় দেশীয় মাছের প্রজাতি যেমন বিলুপ্ত হচ্ছে, তেমনি নদের নাব্যতাও হারাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি নদে অবৈধভাবে ঘের দিয়ে বছরের পর বছর মাছ শিকার করছে।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সোহাগ হোসেন বলেন, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তিতাস নদের অবৈধ ঘের অপসারণ করতে বিআইডব্লিউটিএ তাঁদের চিঠি দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।