বই প্রচুর, পাঠক হাতে গোনা

মানিকগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার। ছবিটি গত সোমবার দুপুরে তোলা l প্রথম আলো
মানিকগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার। ছবিটি গত সোমবার দুপুরে তোলা l প্রথম আলো

সারিবদ্ধ আলমারিতে বিভিন্ন ধরনের ৩৫ হাজারের বেশি বই। আছে চেয়ার-টেবিল। তবে পাঠক মাত্র দুজন। এই অবস্থা মানিকগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগারের। গত সোম ও মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহরের বেউথা এলাকায় অবস্থিত গ্রন্থাগারটিতে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

জেলা শহরের এক পাশে গ্রন্থাগারটির অবস্থান হওয়ায় এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া না থাকায় দিন দিন গ্রন্থাগারটিতে পাঠকসংখ্যা কমছে। জনবলসংকটসহ গ্রন্থাগারটিতে আছে বেশ কিছু সমস্যাও।

কয়েকজন পাঠকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জেলা শহর থেকে খানিকটা দূরে হওয়ায় এ গ্রন্থাগারে পাঠকের আনাগোনা খুব কম। শিক্ষার্থীদেরও গ্রন্থাগারটিতে গিয়ে বই পড়ার তেমন আগ্রহ নেই।

গণগ্রন্থাগারটির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের বেউথা মৌজায় ৩৩ শতক জমির ওপর একতলা ভবনবিশিষ্ট গণগ্রন্থাগারটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় গ্রন্থাগার অধিদপ্তর। ১ কোটি ৭০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরটি অ্যান্ড রাজু এন্টারপ্রাইজ। মডার্ন ইঞ্জিনিয়ারস প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান এটি বাস্তবায়নে ছিল। কাজ শেষে ২০১২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ভবনটি গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরকে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে একই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ভবনটিতে গ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরু হয়।

বর্তমানে গণগ্রন্থাগারটিতে বিভিন্ন বিষয়ের ৩৫ হাজার ২৫২টি বই আছে। আটটি জাতীয় দৈনিক ও একটি স্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্র রাখা হয় এখানে। ছোট-বড় ৫৬টি আলমারিতে এসব বই ও পত্রিকা রাখা হয়েছে। এখানে ২২টি টেবিল ও ১৫০টি চেয়ার আছে। তা ছাড়া আছে শিশু কর্নার। এখানে শিশুদের জন্য ‘খেলতে খেলতে শেখা’ কার্যক্রমও চালু আছে।

তবে গ্রন্থাগারটিতে বেশ কিছু সমস্যাও আছে। গ্রন্থাগারিক, কনিষ্ঠ (জুনিয়র) গ্রন্থাগারিক, গ্রন্থাগারিকের সহকারী ও অফিস সহায়ক—এই চারটি স্থায়ী পদ আছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে গ্রন্থাগারিক ও গ্রন্থাগারিকের সহকারী নেই। গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করছেন কনিষ্ঠ গ্রন্থাগারিক। নৈশপ্রহরীর পদ থাকলেও দায়িত্বে কেউ নেই। এ ছাড়া ভবনটির তিন-চারটি স্থানে দেয়ালে ফাটল ধরেছে।

সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণগ্রন্থাগারটি খোলা থাকে। বইপড়ার সুন্দর ও নিরিবিলি পরিবেশ থাকলেও শুরু থেকেই পাঠকদের আগ্রহ খুবই কম। এ কারণে দিন দিন কমছে পাঠকসংখ্যা।

জেলা শহরের একটি কলেজের শিক্ষক ও লেখক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, পাঁচ বছর আগে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ রফিক সড়কে ওই গণগ্রন্থাগারটি ছিল। সেখানকার আশপাশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির পাঠক বই পড়তে ভিড় করতেন। তিনিও নিয়মিত বই পড়তে যেতেন। এখন শহরের এক পাশে হওয়ায় গণগ্রন্থাগারটিতে পাঠক একেবারেই কমে গেছে। সরেজমিনে জানা গেছে, গত সোম ও মঙ্গলবার ১৩ জন করে পাঠক বই পড়তে গণগ্রন্থাগারে গিয়েছিলেন।

জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি গাজী ওয়াজেদ আলম বলেন, ইন্টারনেট হাতের মুঠোয় এসে যাওয়ায় মানুষের বইপড়ার অভ্যাস দিন দিন কমে এসেছে।

মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের স্নাতকোত্তরের ছাত্র চঞ্চল চন্দ্র দাস এবং স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী জেসমিন আক্তার বলেন, এখানে দেশ-বিদেশের নানা তথ্য জানতে ইন্টারনেট সেবা চালু নেই।

পাঠকের উপস্থিতি কম থাকার সত্যতা স্বীকার করেন ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক মাসুমা নাজনীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রন্থাগারটিতে পাঠকসংখ্যা বাড়াতে বিভিন্ন দিবসে নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া আধুনিকায়নের জন্য ইন্টারনেট-সংযোগ ও কম্পিউটারের ব্যবস্থা করার জন্য গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরে আবেদন করা হবে। দেয়ালে ফাটল দেখা দিলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে ফল মেলেনি।