কাদাপানিতে ১২ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের জয়বাংলা-রহিমাপুর মণ্ডলপাড়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তাটির বেহাল দশা। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তাটি কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। এ ছাড়া বর্ষার সময় রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে এই ইউনিয়নের ১২ গ্রামের বাসিন্দাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
ওই ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম রহিমাপুর মণ্ডলপাড়া। কিন্তু লোকজন উপহাস করে ডাকে কাদার-গাঁ মণ্ডলপাড়া বলে। বর্ষা এলেই এক প্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে গ্রামটির মানুষ। বর্ষা মৌসুমে কাদার জন্য লোকজন কোনো কাজে গ্রামের বাইরে যেতে চায় না। গ্রামে বিদ্যালয় থাকলেও ভোগান্তির কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় যেতে চায় না।
কুর্শা ইউনিয়নের অন্য গ্রামগুলো হলো জয়বাংলা, কবিরাজপাড়া, খিয়ারপাড়া, হাজিপাড়া, কুঠিপাড়া, জুম্মাপাড়া, সরকারপাড়া, চাকলা, জলুবার, বানয়িপাড়া ও জেলেপাড়া।
ওই ১২ গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, পুরো বর্ষায় এই রাস্তাটি কাদায় ভরে থাকে। তাঁরা এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বহু ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। শুধু রাস্তাটির কারণে ১২ গ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিকাজ স্থবির হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গত সোমবার গিয়ে দেখা যায়, কাদা মাড়িয়ে রাস্তা দিয়ে জুতা হাতে কয়েকজন পথচারী ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন। জয়বাংলা গ্রামের আনছার আলী ও একরামুল হক প্রাণপণ চেষ্টায় তাঁদের রিকশাভ্যান টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই রাস্তা দিয়ে বাইসাইকেলে করে যাওয়ার সময় হাজিপাড়া মোড়ে বাইসাইকেলসহ কাদায় পড়ে যান এক আরোহী।
কবিরাজপাড়া গ্রামের দিনমজুর মহিউদ্দিন বলেন, ‘হামার গ্রামোত যাওয়ার আস্তা (রাস্তা) কোনার ১৫ বছরেও কোনো উন্নয়ন নাই। বারো কষ্ট করি যাওয়া-আইসা করিবার নাগে। বর্ষার সময় কাদার জইন্যে বাড়িত থাকি কামোত যাবার পাই না।’
কুঠিপাড়া গ্রামের শিক্ষিত যুবক বাবুল হোসেন বলেন, ‘হাঁটুসমান কাদা মাড়িয়ে কী যে কষ্টে চলাচল করতে হয়, তা বোঝানোর না। গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তা নিয়ে কেউ ভাবেও না।’
রহিমাপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক আবু বক্কর বলেন, ‘ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি আমার দাদার আমলের। অথচ বর্ষাকালে এটি প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কাদার কারণে গ্রামের লোকজন বাইরে যেতে পারে না।’
রহিমাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য তুহিনুর ইসলাম বলেন, ‘ভাই, আমার মনে হয় দেশের কোথাও এত খারাপ রাস্তা নাই। এই রাস্তার জন্য অনেক জায়গায় দেনদরবার হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি।’
কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আফজালুল হক বলেন, ‘ওই রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য স্থানীয় সাংসদকে অনুরোধ করেছি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি জানিয়েছি। উপজেলা উন্নয়ন কমিটির সভায়ও একাধিকবার বিষয়টি উপস্থাপন করেছি। কিন্তু কাজ হয়নি। ফলে ওই ১২ গ্রামের মানুষ কাদাপানি মাড়িয়ে অতি কষ্টে চলাচল করছেন।’
তারাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মেদ হায়দার বলেন, ‘রাস্তাটির বেহাল অবস্থা আমাদের জানা আছে। বরাদ্দ এলে এটি পাকা করা হবে।’