নির্মাণের তিন মাসেই ভেঙে গেল বাঁধ

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙনে গত এক সপ্তাহে ৫০টি পরিবারের বাড়ি ও জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে ২০০ ফুট দূরে রয়েছে চর শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙনে গত এক সপ্তাহে ৫০টি পরিবারের বাড়ি ও জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে ২০০ ফুট দূরে রয়েছে চর শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো

উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট অংশ ভেঙে গেছে। সেই সঙ্গে বাঁধের বাকি ২ হাজার ফুট অংশ ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া ভাঙনে প্রায় ৫০টি পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এর ফলে শংকরদহ গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন শ পরিবার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তি ও লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মোন্নাফ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে শংকরদহ গ্রামটি রক্ষার জন্য গত মার্চে তিস্তা নদীর উত্তর দিকে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ফুট দীর্ঘ মাটির একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট অংশ গতকাল শনিবার সকালে পানির তোড়ে ভেসে যায় এবং গত এক সপ্তাহে ৫০টি পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, শংকরদহ গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন শ পরিবারের বাস। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেখানে বসবাসরত পরিবারগুলোর মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চর শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীভাঙন এলাকা থেকে ২০০ ফুট দূরে। বিদ্যালয়টি যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার জন্য ছয় বছর আগে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা একটি সেতুও এখন হুমকির মুখে।

শংকরদহ গ্রামের কৃষক দুলু মিয়া ইতিমধ্যে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ্যালা থাকারও জায়গা নাই। ভাঙন এলাকা থাকি একটু দূরোত মাইনসের জায়গাত কোনো রকমে ঘর তুলছি। সেটেও থাকা হইবে কি না কায় জানে।’

গত এক সপ্তাহে দিনমজুর সিরাজুল ইসলামের বসতভিটা, ভুট্টাখেতসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এত দিন তো কোনো রকমে ছিনো। এ্যালা কোনটে থাকমো তারও কোনো জায়গা খুঁজি পাইছি না। হামরাগুলা শেষ হয়া গেইনো।’

ভাঙনের মুখে থাকা বসতভিটেমাটিতে অবস্থানরত কৃষক জোনাব আলী বলেন, ‘এবার যে ভাঙন দেখা দিছে, তাতে করি মনে হইতোছে এবার হামারগুলার বাড়িঘর রক্ষা হবার নয়।’ একই ধরনের কথা বলেন কৃষক মোহাম্মদ আলী, চাঁদ মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, ইউসুফ আলী, মমিনুর রহমানসহ আরও অনেকে।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, পানির স্রোতে নবনির্মিত মাটির বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। আরও কিছু অংশ ভাঙনের মুখে রয়েছে। ভাঙনের এই অবস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মনসুর আলী বলেন, নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হবে। তবে কবে নাগাদ করা হবে, তা জানা যায়নি।