আসামিরা স্বীকারোক্তি দিলেও উদ্ধার নেই

আশিক হাছান  ও  সাদেক মিয়া
আশিক হাছান ও সাদেক মিয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে অপহরণের শিকার দুই ছাত্র দীর্ঘদিনেও উদ্ধার হয়নি। অথচ এ ঘটনার মূল হোতাসহ চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত শনিবার রাতে তিন আসামির রিমান্ড সম্পন্ন হয়েছে। তারপরও শিশু দুটির অবস্থান সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শিশু দুটির পরিবার।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ২০ এপ্রিল বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরের সোহেল মার্কেট এলাকা থেকে বাঞ্ছারামপুর আলিয়া মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আশিক হাসানকে (১১) অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় ২২ এপ্রিল আশিকের মা নাজমা বেগম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অপহরণের অন্য ঘটনাটি ঘটে এর ৪২ দিন পর ৩ জুন। এ দিন উপজেলা সদরের এসআর সুপার মার্কেট এলাকা থেকে দশদোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছাদেক মিয়া (১১) অপহৃত হয়। ৯ জুন তার বাবা মনির হোসেন থানায় অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন। দুটি ঘটনার কোনোটিতেই বাদীরা অভিযুক্ত হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করেননি।

ছাদেকের বাবা মনির হোসেন বলেন, ‘এক মাস হয়ে গেল, এখনো আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এইবারই প্রথম আমার বড় ছেলেকে বাদ দিয়া ঈদ করলাম, ছেলের এমন বিপদে আমাদের ঈদ এইবার মাটি হইয়া গেছে। জানি না ছেলেডা বেঁচে আছে কি না।’

পুলিশ বলছে, শিশু দুটিকে অপহরণের ঘটনায় একই চক্র জড়িত। চক্রটির মূল হোতা মো. রফিক (৪৫)। তিনি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। রফিক ছাড়াও অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। তবে তাঁরা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ায় দুই ছাত্রকে উদ্ধার ও অপহরণকারী চক্রটির অন্য সদস্যদের আটক করা যাচ্ছে না।

গ্রেপ্তার হওয়া অন্য ব্যক্তিরা হলেন মো. রফিকের ছেলে মো. রাশেদ (১৪), বাঞ্ছারামপুরের ছলিমাবাদ গ্রামের আছিয়া বেগম (৪০) ও মো. মহিউদ্দিন (১৮); নিলখী গ্রামের পবন দাস (১৮) ও মো. মহসীন মিয়া (২৫); মরিচাকান্দি গ্রামের মো. শরীফ মিয়া (৪০), দশদোনা গ্রামের মো. আল আমিন (৫০); মো. সাব মিয়া (৪০) ও সফিকুল ইসলাম (৩২) এবং আইয়ুবপুর গ্রামের সফিক মিয়া (৪০)।

গ্রেপ্তার হওয়া চারজন অপহরণে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আছিয়া বেগম ১৮ জুন, মো. রফিক ২১ জুন, রাশেদ মিয়া ২২ জুন ও সফিক মিয়া ২৪ জুন জবানবন্দি দেন। তাঁদের মধ্যে আছিয়া বেগমের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়, যেটি ব্যবহার করে ওই শিশুদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল। মুঠোফোনটি তাঁকে রফিক দিয়েছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন আছিয়া।

বাঞ্ছারামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাব্বির রহমান বলেন, রফিককে গ্রেপ্তার করার পর থেকে মুক্তিপণ চাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। অপহরণের এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রফিকের পাশাপাশি শরীফ ও সাব মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল। আদালত গত মঙ্গলবার তাঁদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। গত শনিবার রাতে রিমান্ড শেষ হয়েছে। তিনজনই অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন, তবে শিশু দুটির অবস্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রফিক ও শরীফকে আবারও রিমান্ডে আনার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। শিশু দুটিকে উদ্ধারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।