ইউপি সদস্যসহ ১৩ জন গ্রেপ্তার

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় সালিসের নামে গৃহবধূ ও যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ ১৭ জনকে আসামি করে গাংনী থানায় এ মামলা করা হয়। এরপর এক ইউপি সদস্যসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন তেঁতুলবাড়িয়া ইউপির সদস্য আবদুল হামিদ (৫২) এবং শিহাব উদ্দীন (২৫), মো. মইনদ্দিন (৪০), আমানুল্লাহ (৪৫), শরিফুল ইসলাম (৪২), কাউছার আলী (৪০), আব্দুল হামেদ (৫০), আব্দুর রহমান (৫৫), কাবের উদ্দিন (৪৫), আব্দুল হাকিম (৪০), খলিল মণ্ডল (৫০), আজমাইল হোসেন (২৭) ও আবু তালেব (৪৫)। পরে তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের এক গৃহবধূ ও যুবককে রশিতে বেঁধে গ্রামে ঘোরানো হয়। এ দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পরে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ওই যুবকের ডান হাত গৃহবধূর বাঁ হাতের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে ঘরের বারান্দা থেকে উঠানে নামানো হচ্ছে। এরপর অনেক মানুষের উপস্থিতিতে তাঁদের দুজনকে গ্রামের রাস্তায় ঘোরানো হয়। একপর্যায়ে গৃহবধূর বাড়ির পাশে সালিস বসে। একাধিক ছবিতে দেখা যায়, সেখানে দুজনকে হাত বাঁধা অবস্থায়ই মাটিতে বসিয়ে রাখা হয়।

এ ছাড়া গৃহবধূ ও যুবককে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও মাতবররা ২ জুলাই গৃহবধূর প্রবাসী স্বামীর বাড়ির কাছে ওই সালিস বসান। এরপর গৃহবধূ ও তাঁর বোনকে তাঁদের শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।

শনিবার প্রথম আলোতে ‘গাংনীতে সালিসে গৃহবধূ ও যুবককে নির্যাতন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন পড়ে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নির্যাতনের এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ওই গৃহবধূর পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মানবাধিকার সংগঠন মউক। মউকের তিন সদস্যের একটি দল গতকাল ওই গৃহবধূর বাবার বাড়ি গিয়ে সাক্ষাৎ করেছে। সংগঠনটির একজন কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এটি একটি বর্বরোচিত ঘটনা। সালিসের নামে নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, গতকাল দিনভর বিভিন্নভাবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলে। গ্রাম্য মাতবর কিংবা জনপ্রতিনিধিদের এ ধরনের বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় পুলিশের তাৎক্ষণিক অভিযানে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ইউপি সদস্য আবদুল হামিদ সালিসে বিচারকারীদের একজন ছিলেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, ঘটনার ভিডিও চিত্র ও ছবি দেখেছি। এই নির্যাতন ও অবিচারের সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছুটিতে থাকায় গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম জামাল আহম্মেদকে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’