সিঙ্গাইরে ফসলি জমিতে হচ্ছে দুটি অবৈধ ইটভাটা

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের খোলাপাড়ায় ফসলি জমিতে স্থাপন করা হচ্ছে ইটভাটা। ছবিটি বৃহস্পতিবার তোলা l প্রথম আলো
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের খোলাপাড়ায় ফসলি জমিতে স্থাপন করা হচ্ছে ইটভাটা। ছবিটি বৃহস্পতিবার তোলা l প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার খোলাপাড়া গ্রামে গত বছর পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয় একটি ইটভাটা। এর পাশেই এ বছর অবৈধভাবে আরও দুটি ভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত বছর খোলাপাড়া এলাকায় তিন ফসলি জমিতে এএমবি নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করা হয়। স্থানীয় আবদুল মালেক, আমিনুল ইসলাম, ময়ূর আলীসহ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের নিবন্ধন ছাড়াই ভাটা স্থাপন করে ইট পোড়াচ্ছেন। এই ভাটার পাশে তাঁরা একই নামে আরেকটি ভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন। নির্মাণাধীন এই ভাটার পাশে অবৈধভাবে এমএবি স্টার নামে অন্য একটি ভাটা স্থাপনের কাজ চলছে। মোহর আলীসহ স্থানীয় প্রভাবশালী ছয় ব্যক্তি যৌথভাবে এই ভাটা স্থাপন করছেন। তাঁরা নিজেদের কিছু জমি এবং পার্শ্ববর্তী কৃষকদের জমি ভাড়া নিয়ে এসব ভাটা করছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন ওই ভাটা দুটির কাজ বন্ধে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি দপ্তরে লিখিত আবেদন করেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার এসব ভাটা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় তেলিখোলা গ্রামে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন এলাকাবাসী।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, খোলাপাড়া গ্রামে ধান কেটে নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো কৃষক পাট আবাদ করেছেন। এসব জমির মধ্যেই গত বছর নির্মাণ করা হয়েছে একটি ভাটা। নতুন করে করা হচ্ছে আরও দুটি ভাটা।

খোলাপাড়াসংলগ্ন তেলিখোলা গ্রামের কৃষক হাসেন আলী বলেন, খোলাপাড়ায় নির্মাণাধীন দুটি ভাটার পাশেই তাঁর সাত বিঘা জমি আছে। তিন ফসলি এই জমিতে ধান, সরিষা, পাটসহ সবজির আবাদ করা হয়। ভাটা হলে ইট পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

কৃষক আবদুস ছালাম বলেন, নির্মাণাধীন ভাটা দুটির পাশেই লোকালয়, স্কুল, মসজিদ, মহিলা মাদ্রাসা, কবরস্থান ও বাজার আছে। ভাটা দুটি হলে ফসলের ক্ষতি হবে। পাশাপাশি এলাকায় বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়বে।

ভাটার মালিক আমিনুল ইসলাম (উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপির সাবেক সদস্য), আবদুল মালেক, ময়ূর আলী ও মোহর আলীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ছাড়পত্র পাওয়ার পর জেলা প্রশাসনের কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে।

জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক তুহিন আলম প্রথম আলোকে বলেন, কৃষি বিভাগের প্রত্যয়নপত্র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের অনাপত্তি, ট্রেড লাইসেন্স, আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ আবেদনপত্র হাতে পেলে সরেজমিনে তদন্ত করে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কৃষি বিভাগ থেকে অনাবাদি জমির প্রত্যয়ন না দিলে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সিঙ্গাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, কৃষি বিভাগের প্রত্যয়নপত্র নেওয়ার আগেই মালিকেরা ভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করেন। উপজেলার খোলাপাড়া গ্রামে কোথাও তিন ফসলি আবার কোথাও দুই ফসলি জমি আছে। ওখানে ভাটা হলে কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং কৃষিজমি কমে যাবে। ওই স্থানে ভাটা স্থাপনে কৃষি বিভাগ থেকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে না।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাঈদ আনোয়ার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুটি ইটভাটাকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। আগেরটিরও ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তাই সেগুলো অবৈধ। এসব ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।