বৃষ্টি হলে কাদার পুকুর, শুকনায় ধুলায় অন্ধকার

বেড়িবাঁধ সড়কের আদাবর এলাকা বেহাল, যান চলাচলের অনুপযোগী। বৃষ্টি হলে পুরো সড়কেরই এই হাল হয়। গত বৃহস্পতিবারের চিত্র  ছবি: প্রথম আলো।
বেড়িবাঁধ সড়কের আদাবর এলাকা বেহাল, যান চলাচলের অনুপযোগী। বৃষ্টি হলে পুরো সড়কেরই এই হাল হয়। গত বৃহস্পতিবারের চিত্র ছবি: প্রথম আলো।

বাবুবাজার থেকে গাবতলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এসব গর্ত কিছুদিন পরপর মেরামত করা হলেও স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হয় না। ফলে এ সড়কে চলাচলকারী মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বাবুবাজার থেকে গাবতলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কটির দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। বাবুবাজার ব্রিজের নিচ থেকে গাবতলীর উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। ব্রিজের নিচ থেকে বেড়িবাঁধ সড়কের কিছু অংশ ভালো থাকলেও কিছুদূর এগোলেই বিপরীত চিত্র চোখে পড়ে। সড়কের স্থানে স্থানে গর্ত। আস্তর উঠে গেছে। রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখায় অর্ধেক রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে পারে না।

একই সড়কের গাবতলী অংশ গতকাল ছিল ধুলায় আচ্ছন্ন। l ছবি: প্রথম আলো
একই সড়কের গাবতলী অংশ গতকাল ছিল ধুলায় আচ্ছন্ন। l ছবি: প্রথম আলো

বেড়িবাঁধের এ সড়কে বাস, ভ্যান-লরি, হিউম্যান হলারসহ সব ধরনের যানবাহন চলে। কিছুদূর যাওয়ার পরই সোয়ারীঘাটের আগে থেকে শুরু হয়েছে যানজট। এ অংশে পুরো সড়কই ভাঙাচোরা। দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে গিয়ে আটকে যায়।

বাবুবাজার থেকে আসা প্রত্যয় পরিবহনের আরেকটি বাসের চাকা গর্তে পড়ে আটকে গেছে। এখানে দুজন ট্রাফিক পুলিশকে দেখা যায় বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাস থামিয়ে রাস্তার যান চলাচল স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছেন। এ বাসের কয়েকজন যাত্রী বলেন, বছরের পর বছর এই সড়কের অবস্থা খারাপ। আবার বাস এমনভাবে চলে যেন মনে হয় যেকোনো সময় কাত হয়ে উল্টে যাবে। অনেক যাত্রী দোয়াদরুদ পড়তে থাকেন।

মোছাম্মৎ মরিয়ম নামের এক যাত্রী বলেন, রাস্তার অবস্থা এত খারাপ থাকে যে কামরাঙ্গীর চর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তা হেঁটে এসেছেন; গাড়িতে আসতে ভয় লাগে।

বাসচালকের সহকারী সোহাগ বলেন, ভাঙা রাস্তায় চলতে গিয়ে বাস বিকল হয়ে যায়। আর গর্ত পার হওয়ার সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনি লাগে। যাত্রীরা চালককে বকাঝকা করেন।

সোয়ারীঘাটের কাছে এ সড়কে একটি ভ্যানের চাকা ভেঙে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাথায় ড্রাম নিয়ে রাস্তা পার হওয়া শ্রমিক ওবায়দুল্লাহ বলেন, ভ্যানটি গর্তে পড়ে চাকা মচকে পড়ে আছে। চালক চলে গেছে। কেউ এটা সরাচ্ছেও না। তিনি বলেন, এখানে সড়কের মাঝখানে ট্রাক থামিয়ে বুড়িগঙ্গায় ট্রলারে পণ্য ওঠানোও হয়। তখন সড়কের গাড়ির জট লেগে যায়। মানুষ হাঁটার জায়গাও থাকে না।

প্রত্যয় ট্রান্সপোর্টের যাত্রী নাজমুল হুদা বলেন, তিনি সাভার যাবেন। বাবুবাজার থেকে বাসে উঠেছেন। বেড়িবাঁধ দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হয়। তবে তিনি ছয় মাস ধরে দেখছেন এ পথের অবস্থা করুণ। তিনি বলেন, রাস্তার গর্তের কারণে বাস কাত হয়ে যায়। ভয় লাগে।

এ পথে চলে যানজাবিল নামের বাস। চালক মো. আসলাম বলেন, ১০ বছর ধরে তিনি এ পথে বাস চালাচ্ছেন। সড়কের অবস্থা ভালো দেখেননি। তিনি বলেন, সোয়ারীঘাট, সেকশন, দীপনগরে রাস্তার অবস্থা একদম খারাপ। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বাসচালক আসলাম বলেন, এ সড়কে কোনো সড়কবাতি নেই। রাতের বেলায় এসব ভাঙা সড়কে বাসের হেডলাইট ও রাস্তার পাশের দোকান থেকে আসা আলোয় গাড়ি চালাতে হয়। আর বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা আর কাদায় ভর্তি এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের নোংরা পানি ও কাদায় পা ডুবিয়ে পথ চলতে হয়। শুকনায় ধুলার জন্য নাক-মুখ চেপে ধরে চলতে হয়।

এ পথে নিয়মিত চলাচল করেন মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন পরপর দেখি কোনো রকমে জায়গায় জায়গায় মেরামত করে, তারপর আবার বৃষ্টি হলে সেগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সোয়ারীঘাটের মাছ বাজার ও কাঁচাবাজার অংশে বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয় রাস্তায়।’

কামালবাগ, হালীরঘাট, ইসলামবাগ, কামরাঙ্গীর চরের লোহার ব্রিজ, ইমামগঞ্জ, কিল্লার মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তা এবড়োখেবড়ো। কামালবাগের কিছু অংশে ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে। এখানকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, এ সড়কে ঢালাই উঠে গেছে আরও আগে। বৃষ্টি হলে রাস্তা হয় কাদার পুকুর। শুকনায় ধুলায় অন্ধকার।

শহীদনগরের অংশে বেড়িবাঁধের লোহার ব্রিজ এলাকায় ব্রাদার্স পরিবহনের বাসচালক মো. সেলিম বলেন, কয়েক জায়গায় ভাঙা রাস্তায় মাটি আর খোয়া ফেলা হয়েছিল। সেগুলোও বেশি দিন টেকেনি। সেগুলো উঠে গিয়ে চাষ করা জমির মতো অবস্থা হয়েছে।

কামরাঙ্গীর চরের লোহার ব্রিজের পর থেকে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কের অবস্থা কিছুটা ভালো। এই ভালোর মধ্যেও স্মৃতিসৌধ পার হলে আবার ছোট-বড় গর্ত।

এরপর বসিলা থেকে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত সড়কে গর্ত নেই। তবে ঢাকা উদ্যান পার হলে গাবতলী পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খারাপ।

ঢাকাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু ঘেঁষে বাদামতলী-বাবুবাজার ও সোয়ারীঘাট দিয়ে গাবতলী হয়ে টঙ্গীর আবদুল্লাহপুর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৮ সালে বেড়িবাঁধ সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে পাউবোর ঢাকা ডিভিশন-২-এর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. তবিবর রহমান বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে পাউবো বেড়িবাঁধ সড়কটি নির্মাণ করে। বেশ কিছুদিন তারা এ সড়ক মেরামতও করেছে। এরপর এখন সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেড়িবাঁধ সড়কটি সওজ দেখাশোনা করছে। পাশাপাশি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও সড়কটি দেখভাল করছে।