২০ বছর পর 'ঢাউস' কমিটি হচ্ছে

চলতি সপ্তাহেই চট্টগ্রাম নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। গতকাল রোববার রাতে ঢাকার গুলশানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে কমিটির ২৭৫ জনের নামের তালিকা জমা দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার সম্মতি পাওয়া সাপেক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিতে পারেন। এর আগে দুই দশকে চার দফা কমিটি হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি চট্টগ্রাম নগর বিএনপি।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১৫১ সদস্যের নগর কমিটি হওয়ার কথা। এর বাইরে আরও ১২৪ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্র জানায়। এতে কমিটির সদস্য হবে ২৭৫ জন। গঠনতন্ত্রের বাইরে কেন ঢাউস কমিটি করা হচ্ছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে চট্টগ্রামের নেতারা পদ-পদবি পাননি। এ জন্য ২৭৫ সদস্যের তালিকা অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ৬ আগস্ট শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি, আবুল হাশেমকে সাধারণ সম্পাদক ও আবু সুফিয়ানকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি করে কেন্দ্র থেকে তিন সদস্যের কমিটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১১ মাস পর এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের সিনিয়র তিন নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান ও মোরশেদ খানের সম্মতি নিয়ে ২৭৫ জনের একটি তালিকা করেছি আমরা। তালিকা ম্যাডামের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে। ম্যাডামের সম্মতি পাওয়ার পর দু-এক দিনের মধ্যে মহাসচিব পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেবেন।’

গতকাল রাত ১২টায় চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা খালেদা জিয়ার হাতে ২৭৫ জনের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন। এই কমিটি অনুমোদন দেওয়া হলে সাংগঠনিকভাবে চট্টগ্রামে দল আরও শক্তিশালী হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় নগর বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। কিছু দিন আগে খালেদা জিয়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানকে চট্টগ্রাম নগর কমিটি দ্রুত গঠন করার দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি তাঁর বাসায় গত শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টা চট্টগ্রামের বিএনপির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে নগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। নগর কমিটি নিয়ে তাঁরা কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মোরশেদ খানের সঙ্গে।

১৯৯৭ সালে মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন সভাপতি, দস্তগীর চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক এবং এফ এইচ খানকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ২০০৪ সালে সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হয়। ২০০৮ সালে আবার আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং তাঁর নেতৃত্বে ১১ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যের কমিটি গঠন হয়। এরপর ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সভাপতি ও শাহাদাত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কারা জায়গা পাচ্ছেন তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, গাড়ির ড্রাইভার, কেয়ারটেকার, দারোয়ান, পিয়ন, তরকারি সাপ্লাইয়ারও (সরবরাহকারী) কমিটিতে থাকছেন বলে তিনি শুনেছেন। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি মন্তব্যও করেন।

এই মন্তব্যের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা মাঠের কর্মীদের মূল্যায়ন করেছি। তালিকায় চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, পেশাজীবী নেতা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান এবং নারী প্রতিনিধির নাম রয়েছে।’