শিকলবন্দী জীবন ফাতেমার

ফাতেমা আক্তার
ফাতেমা আক্তার

দীর্ঘ ছয় বছর ধরে শিকলবন্দী হয়ে জীবন কাটছে ফাতেমা আক্তারের। মানসিকভাবে অসুস্থ তিনি। প্রায়ই হিংস্র হয়ে পড়েন। তাই বদ্ধ ঘরে তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে তাঁর পরিবার।

ফাতেমার বয়স এখন ২১-২২ বছর। বাড়ি কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জিনারি ইউনিয়নের চরকাটিহারী গ্রামে। ফাতেমার বাবা দরিদ্র কৃষক মহিবুর রহমান। ছয় ভাইবোনের মধ্যে ফাতেমা পঞ্চম।

বাবা মহিবুর রহমান বলেন, ফাতেমা ২০১১ সালে উপজেলার হোগলাকান্দি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। এ কারণে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। তখন থেকেই তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। শুরুতে কিছুদিন চিকিৎসা করানো হয়। তবে টাকার অভাবে স্থায়ী চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি।

বাবা মহিবুর জানান, মা-বাবাসহ কাউকে সামনে পেলে ফাতেমা প্রায়ই দা নিয়ে কোপাতে আসেন। সে জন্য তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে ঘরে আটকে রাখা হয়।

কৃষক মহিবুরের সংসারে দুঃখের শেষ নেই। বড় ছেলে বাবুল সর্দারের তিন সন্তানের মধ্যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। দ্বিতীয় ছেলে রফিকুল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় একটি চোখ হারিয়েছেন। তৃতীয় ও চতুর্থ মেয়ে যৌতুকের কারণে বিয়ের পর সংসার করতে পারেননি। তারা সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে আছেন। ছোট ছেলে পাপ্পু মিয়া (১৫) একটি মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ছে।

ফাতেমার মা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘কে চায় নিজের মেয়েকে এভাবে বদ্ধ ঘরে নোংরা অবস্থায় বন্দী করে রাখতে?’

হোসেনপুর উপজেলার ইউএনও আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ফাতেমার ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আহসানিয়া মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার আক্তার জামিল বলেন, ‘আশা করছি, আহসানিয়া মিশন ফাতেমার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।’