আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রার্থীদের প্রচারণা

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের তিনটি এবং হরিপুর উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রার্থীদের লোকজন যানবাহন নিয়ে শোডাউন দিচ্ছেন। মানছেন না মাইক ব্যবহারের আইনও। দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়েছেন পোস্টার। সড়কে প্রতীক ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে তোরণ।

গত রোববার ও গতকাল সোমবার সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালানোর এসব চিত্র দেখা গেছে।

প্রথম দলীয় প্রতীকের নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে রানীশংকৈলে আটটির মধ্যে পাঁচটি ইউপিতে নির্বাচন হয়। সীমানা জটিলতায় তিনটি ইউনিয়নের তফসিল ঘোষণা স্থগিত থাকে। গত ৪ জুন এই তিন ইউনিয়নের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী, ১৩ জুলাই রানীশংকৈলের হোসেনগাঁও, নন্দুয়ার ও বাচোর এবং হরিপুরের আমগাঁও ইউনিয়নে উপনির্বাচন হবে।

আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বাচোর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত জিতেন্দ্র নাথ বর্মণ, বিএনপির প্রার্থী ফেরদৌস আলম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আকতারুল ইসলাম এবং জ্যোতিষ চন্দ্র রায়, মো. জাহেদের সমর্থকেরা বসতবাড়িসহ ব্যবসা–শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন।

হোসেনগাঁওয়ে বিএনপির প্রার্থী মাহাবুব আলম, আওয়ামী লীগের গোলাম রব্বানী, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দীনসহ অনেক চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। নাসির উদ্দীন মোটরসাইকেলে রঙিন স্টিকার লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

গত রোববার নন্দুয়ারে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী জমিরুল ইসলামের পক্ষে মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা গেছে। এই ইউনিয়নে জমিরুল ইসলাম ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল বারি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবু সুলতান আচরণবিধি ভঙ্গ করে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। আবু সুলতান মোটরসাইকেলে রঙিন স্টিকার লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আমগাঁও ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থী ইসমাঈল হোসেন, জাতীয় পার্টির বদরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাভেল রহমান বসতবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। পাভেল রহমান যাদুরানী হাটে রঙিন নৌকা প্রতীক ব্যবহার করে তোরণ তৈরি করেছেন।

আমগাঁও ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসমাঈল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রথমে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। তাঁকে দেখে অন্য প্রার্থীর সমর্থকেরাও পোস্টার লাগিয়েছেন।

নির্বাচনী বিধিমালায় বলা হয়েছে, ‘প্রচারের জন্য একটি এবং পথসভার জন্য একটি করে মোট দুটি মাইক ব্যবহার করা যাবে। একই সঙ্গে দুটি মাইক ব্যবহার করা যাবে না। মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রাবর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্রের ব্যবহার বেলা দুইটার আগে ও রাত আটটার পরে করা যাবে না।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নন্দুয়ার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ইজিবাইকে দুটি করে মাইকের হর্ন লাগিয়ে প্রচারণা চালান জমিরুল ইসলাম, আব্দুল বারি ও আমগাঁও ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীর লোকজন।

বাচোর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, ‘দেয়ালে পোস্টার লাগানো আমাদের ট্রেডিশন। এ জন্য কর্মীরা না জেনে কাজটি করেছেন। পোস্টারগুলো অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মো. নাহিদ হাসান বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের প্রতি আমাদের অবস্থান কঠোর। আচরণবিধি লঙ্ঘন সম্পর্কে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’