ত্রাণের চাল কম দেওয়ার অভিযোগ

বগুড়ার সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা ইউনিয়ন পরিষদে বানভাসি মানুষের জন্য দেওয়া ত্রাণের চালে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাল মেপে দেখছে ত্রাণ পাওয়া মানুষ। ছবিটি গতকাল ঘুঘুমারী গ্রাম থেকে তোলা l প্রথম আলো
বগুড়ার সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা ইউনিয়ন পরিষদে বানভাসি মানুষের জন্য দেওয়া ত্রাণের চালে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাল মেপে দেখছে ত্রাণ পাওয়া মানুষ। ছবিটি গতকাল ঘুঘুমারী গ্রাম থেকে তোলা l প্রথম আলো

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় গতকাল সোমবার বন্যাকবলিত মানুষকে সরকারি ত্রাণের চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ চাল বিতরণের অনুষ্ঠানে পুলিশ ও প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় সাংসদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সারওয়ার আলম বলেন, উপজেলার বানভাসি তিন হাজার পরিবারের মাঝে গতকাল ত্রাণের ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চন্দনবাইশা ইউনিয়নের ৫০০ পরিবারকে চাল দেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে ঘুঘুমারি এলাকার বাঁধে স্থানীয় সাংসদ আবদুল মান্নান ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সাংসদ চলে যাওয়ার পর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে চাল বিতরণ করা হয়।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চন্দনবাইশা ইউনিয়নের ঘুঘুমারি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁধের ওপর শামিয়ানা টানানো। চেয়ারে বসেছেন সাংসদসহ অতিথিরা। মাইকে একে একে বক্তব্য দিচ্ছেন অতিথিরা। কেউ কেউ আগামী নির্বাচনে সাংসদের জন্য ভোটও চাইছেন। মঞ্চের সামনে মাটিতে বসা কয়েক শ বানভাসি মানুষ। তাঁরা এসেছেন ত্রাণের আশায়।

ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরুর আগে চন্দনবাইশা ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন মাইকে বলেন, ‘সাংসদ আবদুল মান্নান এলাকার জন্য এত কিছু করছেন। আপনাদের জন্য ত্রাণ আনছেন। আগামী নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট দিয়ে তাঁকে জয়যুক্ত করব।’

সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘একজন মানুষ (সাংসদ) নিজের সুখ, ঘুম হারাম করে এলাকাবাসীর জন্য এত কিছু করছেন। তাঁকে ভুলে যাবেন না। নির্বাচনের সামনে অনেক বসন্তের কোকিল আসবে। এলাকাকে এগিয়ে নিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা হাকিম (এডিএম) আবদুস সামাদ বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুখে-দু্ঃখে আপনাদের খোঁজখবর নেন, তাঁকে মনে রাখবেন। আগামী সময়ে সুযোগ হলে প্রতিদান দেবেন।’

সাংসদ আবদুল মান্নান ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরুর আগে বানভাসিদের উদ্দেশে মাইকে বলেন, ‘সারিয়াকান্দিতে বন্যায় এ কষ্ট নতুন নয়। আগেও এর চেয়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করেছি। গত রোববার দেবডাঙ্গা থেকে দড়িপাড়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার বাঁধ ঘুরেছি। ৫০টি অগভীর নলকূপ ও ১০০টি শৌচাগার বসানোর ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক ব্যক্তিকে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে প্রত্যেক পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এই ইউনিয়নে সব মিলিয়ে ৮০০ পরিবার ত্রাণ পাচ্ছে। বন্যার পর গৃহনির্মাণ ও কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া হবে।’

সাংসদ বলেন, ‘যেকোনো অনুষ্ঠানে ভোটের কথা আসে। ভোট চাওয়ার যোগ্যতা লাগে। আমি কম কাজ করিনি। আমার যোগ্যতা কম কিসে? আগামী নির্বাচনে যে কেউ ভোট চাইতে আসলে তাঁর যোগ্যতা বিবেচনা করবেন।’

বাঁধে আশ্রয় নেওয়া ঘুঘুমারি গ্রামের রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘এমপি বলল ২০ কেজি চাল দিচ্ছি। তোমাগেরে ১৫ দিনের ভাতের চিন্তা করতে হবে না। এখন পাল্লায় মাপে দেখি চাল ১৪ কেজি। ছয় কেজি চাল চুরি করছে মেম্বার-চিয়ারমিন।’ একই গ্রামের মাজেদা বেগম বলেন, ‘বস্তাত চাল দেকেই সন্দেহ হচ্চিল। অ্যাসে মাপে দেকি ১৫ কেজি চাল।’

অভিযোগ অস্বীকার করে চন্দনবাইশা ইউপির চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন বলেন, বাটখারার বদলে বালতিতে অনুমান করে চাল বিতরণ করা হয়। তবে তাতেও কাউকে চাল কম দেওয়া হয়নি। যেসব বানভাসি মানুষ কম চাল পাওয়ার অভিযোগ করছেন, তাঁরা এখান থেকে চাল নিয়ে বাঁধের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই মুদিদোকানে দু-এক কেজি করে চাল বিক্রি করেছেন।

জেলা প্রশাসক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ত্রাণের চাল বিতরণে অনিয়ম বা ওজনে কারচুপিতে কেউ জড়িত থাকলে তা বরদাশত করা হবে না। সাংসদ আবদুল মান্নান বলেন, ত্রাণের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে সতর্ক করা হয়েছে।