উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত ও প্রকল্পের টাকা লুটপাটের অভিযোগ

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ২৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি (ব্যবস্থাপনা কমিটি) নেই। এসব বিদ্যালয়ে অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলার ৭ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। এতে উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্তসহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। গত ২২ জুন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভায় ওই অ্যাডহক কমিটিগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৯টি ক্লাস্টারের অধীনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৩৩। এর মধ্যে ২৩০টিতেই ব্যবস্থাপনা কমিটি নেই। ৭ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে মোজাম্মেল হক শাহ্ বিষ্ণুপুর ক্লাস্টারের ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, আবুল কালাম আজাদ বড়দরগাহ্ ক্লাস্টারের ২৬, শাহিনুর আলম কুমেদপুর ও খালাশপীর ক্লাস্টারের ৫১, সিরাজুল ইসলাম পীরগঞ্জ ও চতরা ক্লাস্টারের ৬২, খায়রুল ইসলাম মাদারগঞ্জ ক্লাস্টারের ২৫, শাহানা বেগম খেদমতপুর ক্লাস্টারের ২২ এবং কালীপদ চৌহান ভেন্ডাবাড়ী ক্লাস্টারের ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জোবায়দা রওশন জাহান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ করতে গত অর্থবছর একাধিক প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার টাকাবরাদ্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় (পিইডিপি-৩) প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রাক্‌-প্রাথমিক শিশুদের কক্ষ সজ্জিতকরণে ৫ হাজার করে ১১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, ২০টি বিদ্যালয়ের মাইনর উন্নয়নে ২০ লাখ, স্লিপ প্রকল্পের অধীনে প্রতি বিদ্যালয়ে ৪০ হাজার করে ৯৩ লাখ ২০ হাজার, ৭৮টি বিদ্যালয়ের রুটিন মেরামতকাজে ৯ হাজার করে ৭ লাখ ২ হাজার এবং চেতনারপাড়া, হাসানপুর ও দ্বারিকামারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ল্যাট্রিন মেরামতে ২০ হাজার করে ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। স্লিপ ও পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ৭৭টি বিদ্যালয়ের বিপরীতে বরাদ্দ পাওয়া টাকায় উন্নয়নকাজ গত ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হয়েছে। ২৩০টি বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকায় কিছু প্রকল্পের অধীনে বিদ্যালয়গুলোর উন্নয়নকাজ করা যাচ্ছিল না। তাই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বিদ্যালয়গুলা পরিচালনায় ওই অ্যাডহক কমিটি করা হয়। ৩০ জুনের আগে কমিটি না করলে বরাদ্দের টাকা ফেরত যেত।

ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়নি কেন? এর জবাবে জোবায়দা রওশন জাহান বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে কমিটি গঠন করতে অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হয়। প্রতি বিদ্যালয়ে কমিটির দুজন বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়ন দেন স্থানীয় সাংসদ। এটা নিয়ে জটিলতা থাকায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। তবে অচিরেই প্রতিটি বিদ্যালয়ের বিপরীতে বিদ্যোৎসাহী একজন করে নারী ও পুরুষ সদস্য মনোনয়ন দেবেন সাংসদ।

 এদিকে বিধি মোতাবেক বিদ্যালয়ের বিপরীতে ওই প্রকল্পগুলোর আওতায় বরাদ্দ টাকায় উন্নয়নকাজ গত ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু অনেক কাজ এখনো শুরুই হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, স্লিপ ও পিইডিপি প্রকল্পের এবং রুটিন মেরামতের নামে বরাদ্দের টাকা তুলে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে উন্নয়নকাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকলে উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা কাজে ফাঁকি ও বাড়তি টাকা উপার্জনের ধান্দায় লুটপাটে ব্যস্ত থাকেন। এতে কাজের টাকা আত্মসাৎই হয় বেশি।

 উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল বলেন, ‘বিভিন্ন বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে প্রকল্পের টাকা তুলে আত্মস্যাৎ করার অভিযোগ আমার কানেও এসেছে।’

কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে, জোবায়দা রওশন জাহান বলেন, ‘প্রকল্পের বরাদ্দের ছাড় দেওয়া টাকায় বিদ্যালয়গুলোতে কী কাজ হয়েছে, তা তদারকির জন্য উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উম্মে হাবিবাকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিব। তবে ২০টি বিদ্যালয়ের মাইনর উন্নয়নে বরাদ্দ পাওয়া ২০ লাখ ও ৩টি বিদ্যালয়ের ল্যাট্রিন মেরামতের ৬০ হাজার টাকা ৩০ জুনের আগে তুলে আমার ও ইউএনওর যৌথ অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে। অচিরেই কাজ শুরু হবে।’