ধরা পড়ল আরও ১২৪টি গোখরা

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় আজ বুধবার একটি বসতঘরের মেঝে খুঁড়ে গোখরা সাপের ৭০টি বাচ্চা পাওয়া গেছে। বাচ্চাগুলো জীবিত রয়েছে। তবে মা সাপের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার মাধবনগর গ্রামে এক ব্যক্তির শোবার ঘরে গোখরা সাপের ৩৭টি বাচ্চা ও ১৫টি ডিম পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন ওই দিন বিকেল থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সাপের বাচ্চাগুলোকে আটকের পর পিটিয়ে মেরে ফেলেন। ডিমগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে মা সাপকে ধরা যায়নি।

একই দিন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘরে গোখরা সাপের ১৭টি বাচ্চা পাওয়া যায়। সেগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন এলাকাবাসী।

কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের চুনিয়াপাড়ার মানোবেশ মজুমদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের বসতবাড়ির একটি কক্ষে তাঁর মাসির স্বামী কিশোরী বিশ্বাস ও ছেলে অসীম বিশ্বাস থাকেন। মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে অসীম ঘরের মধ্যে কয়েকটি বাচ্চা সাপ দেখতে পান। সন্ধ্যায় পাশের সাতপাখিয়া গ্রামের আবদুল গফুর নামের এক সাপুড়েকে খবর দেওয়া হয়। বুধবার ভোর থেকে প্রতিবেশীদের সহায়তায় কক্ষ দুটির মেঝের মাটি খুঁড়ে প্রথমে ১৮ গোখরা সাপের বাচ্চা ধরেন সাপুড়ে। পরে আরেকটি গর্তে মেলে একই প্রজাতির আরও ৫২ বাচ্চা। প্রতিটি বাচ্চা এক থেকে দেড় ফুট লম্বা। বেলা একটা পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি শেষে সাপুড়ে উদ্ধার করা বাচ্চা সাপগুলো একটি খালি পাত্রে ভরে নিয়ে যান।

সাপুড়ে আবদুল গফুর জানান, সচরাচর একই কক্ষের দুই স্থানে একসঙ্গে এত সাপের বাচ্চা পাওয়া যায় না। মনে হচ্ছে, এখানে দুটি মা সাপ রয়েছে। বাড়ির লোকদের সাবধানতা অবলম্বন করে চলাচল করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

নাটোরের নলডাঙ্গার মাধবনগর গ্রামের হাসান আলী আরিন্দা জানান, সোমবার দিবাগত রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তাঁর শোবার ঘরের মেঝেতে গোখরা সাপের একটি বাচ্চা দেখতে পান। এ সময় সাপটি মেরে বাইরে ফেলে দেন তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ির অন্য একটি ঘরে আরও একটি সাপ দেখতে পেলে সেটাকেও তিনি মেরে ফেলেন। একপর্যায়ে ওই ঘরের মেঝেতে একটি গর্ত দেখতে পান তিনি। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ওই গর্ত খুঁড়ে গোখরা সাপের আরও ১০টি বাচ্চা পাওয়া যায়। সেগুলোকে মেরে ফেলা হয়। ওই গর্তে সাপের ১৫টি ডিমও পাওয়া যায়। পরে আরও তিনটি গর্তের সন্ধান পেয়ে স্থানীয় লোকজন সেখান থেকে আরও ২৫টি সাপের বাচ্চা বের করে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। তবে মা সাপটিকে পাওয়া যায়নি। সাপগুলো একেকটি প্রায় দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা।

মাধনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়নাল আবেদিন জানান, হাসানের বাড়িটি মাটির হওয়ায় ওই ঘরে অসংখ্য ইঁদুরের গর্ত রয়েছে। আর সেই গর্তগুলোতে সাপ বাসা বেঁধেছিল। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, চলতি মৌসুমে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ফসলের খেতে ডিম পাড়ার উপযোগী পরিবেশ না পাওয়ায় সাপ মানুষের বসতবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। গ্রামবাসীর আশঙ্কা, সাপের বাসা এলাকায় আরও অনেক বাড়িতেই থাকতে পারে।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ওই গ্রামের মীর কাশেমের বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে ওই বাড়ির লোকজন গোখরা সাপের একটি বাচ্চা দেখতে পান। সাপটিকে পিটিয়ে মারা হয়। পরে ঘরের পাশে একটি গর্ত দেখতে পান তাঁরা। এরপর ওই গর্ত খুঁড়ে সাপের আরও ১৬টি বাচ্চা পাওয়া যায়। সেগুলোকেও পিটিয়ে মারা হয়।

প্রসঙ্গত, এর আগে রাজশাহী নগর ও তানোরের দুটি বাসায় ১৫২টি গোখরা সাপ পাওয়া যায়। এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুর দিকে সাতক্ষীরায় দুটি বাড়িতে ৭৬টি ও গত সোমবার কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার একটি বাড়িতে ২৮টি গোখরা সাপ পাওয়া যায়।