পাথরঘাটায় গৃহবধূকে হত্যা, স্বামী পলাতক

বরগুনার পাথরঘাটায় খাদিজা বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বামী আলী হোসেনের (৪০) বিরুদ্ধে নিজ ঘরে ওই গৃহবধূকে হত্যার এ অভিযোগ উঠেছে। তবে ঘটনার পর থেকে আলী হোসেন পলাতক রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ৩টার কোনো একসময়।

এ ঘটনায় খাদিজা বেগমের ভাই মো. কবির খান বাদী হয়ে আলী হোসেনসহ অজ্ঞাত তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বিকেলে পাথরঘাটা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে খাদিজা বেগমকে নির্যাতন করে আসছেন ভগ্নিপতি আলী হোসেন। ওই নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’

মামলার এজাহার ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটার বলেশ্বর তীরের পদ্মা বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসা করেন আলী হোসেন। ওই বাজারসংলগ্ন এলাকায়ই তাঁর বাড়ি। কিন্তু প্রায়ই রাতে দোকান বন্ধ করে বিলম্ব করে বাড়ি ফিরতেন আলী হোসেন। এ ঘটনা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা-কাটাকাটিও হতো। তবে খাদিজা বেগমের কথা আলী হোসেন শুনতেন না। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময়টুকু বাড়িতে না দিয়ে স্থানীয় এক মেয়ের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক করতেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার স্থানীয় পর্যায়ে সালিস বৈঠকও হয়েছে। তবে ঘটনার দিনও রাত সাড়ে ১০টায় বাড়ি ফেরেন আলী হোসেন। ঘরের এক কক্ষে ছিল বাবা ও মায়ের সঙ্গে তিন বছরের মেয়ে নাদিরা আক্তার। অপর কক্ষে ছিলেন শ্বশুর আমজেদ আলী চাপরাশি ও শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম। মুষলধারে বৃষ্টির সময় ওই রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে খাদিজা বেগমকে হত্যা করেন আলী হোসেন। এ সময় নাদিরার ঘুম ভেঙে গেলে সে কান্নাকাটি করতে থাকে। তার কান্না শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। এ সময় আলী হোসেন পালিয়ে যান।

নাদিরার উদ্ধৃতি দিয়ে পাথরঘাটা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ঘটনার রাতে খাদিজা বেগমকে আলী হোসেন নির্যাতন করছিলেন—এ কথা নাদিরা পুলিশের সামনে স্থানীয় মানুষকে বলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আলী হোসেন এ ঘটনায় জড়িত।

খাদিজা বেগমের ভাই মো. কবির খান বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর আগে খাদিজা বেগমকে আলী হোসেনের সঙ্গে বিবাহ দিই। বিবাহের বছর দুই পর থেকেই যৌতুকসহ বিভিন্ন দাবিতে খাদিজা বেগমকে নির্যাতন করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমাদের জানালে আমরা আলী হোসেনকে বিদেশে যাওয়ার টাকাসহ পরিবারের আসবাব কিনে দিয়েছি। শিগগির তাঁর বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে। তা ছাড়া নির্যাতনের কথা স্থানীয় মেম্বর ও চেয়ারম্যানসহ বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক কার্যালয়েও অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল।’

পাথরঘাটা ব্র্যাক কার্যালয়ের আইনসহায়তা কেন্দ্রের সাবেক উপজেলা কর্মকর্তা (বর্তমানে ভোলার লালমোহনে) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, খাদিজা বেগম নামের এক গৃহবধূর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে স্বামী আলী হোসেন ও তাঁর শ্বশুর আমজেদ আলী চাপরাশিকে নোটিশ করা হয়েছিল। পরে তাঁরা আর কোনো ধরনের নির্যাতন করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছিলেন।

পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জিয়াউল হক বলেন, খাদিজা বেগমের ভাই কবির খান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। মামলার তদন্তসহ আসামি আলী হোসেনকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।