৭ বছরেও চালু হয়নি ৫০ শয্যা কার্যক্রম, কক্ষবন্দী চিকিৎসাযন্ত্র

নয় বছরেও চালু হয়নি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যার কার্যক্রম। ফলে কক্ষবন্দী হয়ে পড়ে আছে চিকিৎসাযন্ত্র। আস্তে আস্তে এসব যন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবাও পাচ্ছে না স্থানীয় লোকজন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বদরগঞ্জ উপজেলা। জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ৭০-৭৫ জন। বহির্বিভাগ থেকে দৈনিক চিকিৎসা নেয় গড়ে ৩০০ রোগী। শয্যার অভাবে অতিরিক্ত ভর্তিরত রোগীর ঠাঁই হয় ওয়ার্ডের মেঝেতে। অতিরিক্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও বিধিমোতাবেক প্রতিদিন সরকারি খাবার সরবরাহ করা হয় ৩১ রোগীর।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ২০০৮ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় সরকার উন্নীত করে। ২০০৯ সালের ১১ জানুয়ারি হাসপাতালের অতিরিক্ত ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত ভবনটি হস্তান্তর করেন ঠিকাদার। এরপর ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ৫০ শয্যার চিকিৎসাকার্যে ব্যবহারের জন্য আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র, অটোক্লেভ, ইসিজি, মলমূত্র, রক্ত পরীক্ষার যন্ত্রসহ বিভিন্ন চিকিৎসাযন্ত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও কয়েকটি এসি হাসপাতালে আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল ও পর্যাপ্ত ওষুধপত্র বরাদ্দ না পাওয়ায় ৫০ শয্যার কার্যক্রম আজও চালু হয়নি।
আমরুলবাড়ি আসমতপাড়া গ্রামের শিক্ষক এম এ মতিন সরকার বলেন, ‘৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম চালুর কথা কয়েক বছর ধরে শুনতেই আছি। কিন্তু চালু হচ্ছে না। এটি চালু হলে উপজেলার সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। এখন প্রশ্ন একটাই, কবে চালু হবে ৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু না হওয়ায় সাড়ে চার বছর আগে বরাদ্দ পাওয়া আধুনিক চিকিৎসাযন্ত্রসহ এসিগুলো কক্ষবন্দী রয়েছে। এসব চিকিৎসাযন্ত্র নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
একজন চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার জনগণের কল্যাণের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতালের অতিরিক্ত ভবন নির্মাণসহ দামি চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দিল। শুধু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই প্রয়োজনীয় জনবল দেওয়া হচ্ছে না। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে বসেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু হলে অবেদনবিদসহ নয়জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সার্বক্ষণিক থাকবে। এতে উপজেলার মানুষ বাড়ির কাছেই আধুনিক চিকিৎসাসেবা পাবে। ৫০ শয্যার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, ওষুধপত্র ও আর্থিক বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। এখন হৃদ্রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখানে হৃদ্রোগের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি আছে। তা জনবলের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কোনো রোগী হাসপাতালে এলে তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করতে হয়। এতে রোগীর জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
রংপুরের সিভিল সার্জন জাকিরুল ইসলাম বলেন, ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালুর জন্য ইতিমধ্যে যাবতীয় কাগজপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, অচিরেই ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালুর জন্য জনবল ও ওষুধপত্র বরাদ্দ পাওয়া যাবে।