অপুষ্টিতে শিশুরা, 'ঝাড়ফুঁকই' চিকিৎসা

জ্বরে আক্রান্ত এক শিশুকে কোলে করে পাহাড়চূড়ার ত্রিপুরাপাড়া থেকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ত্রিপুরাপাড়া থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
জ্বরে আক্রান্ত এক শিশুকে কোলে করে পাহাড়চূড়ার ত্রিপুরাপাড়া থেকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ত্রিপুরাপাড়া থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

দীর্ঘদিনের অপুষ্টির কারণে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির ত্রিপুরাপাড়ার শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এখানকার শিশুরা। জ্বরসহ অজ্ঞাত রোগে এই শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার পেছনে অপুষ্টির বিষয়টিকে প্রাথমিক কারণ ভাবছেন ঢাকা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা।

জ্বরে আক্রান্ত ত্রিপুরাপাড়ার আরও সাত শিশুকে গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে ৫১ শিশু অজ্ঞাত রোগে হাসপাতালে ভর্তি হলো। গত এক সপ্তাহের মধ্যে জ্বর, কাশি, বমিসহ নানা উপসর্গে ভুগে ত্রিপুরাপাড়ার নয় শিশু মারা যায়। এর মধ্যে গত বুধবার এক দিনেই মারা যায় চার শিশু। আক্রান্ত শিশুর শরীরে লালচে গোটা রয়েছে। রোগাক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগমুক্তির জন্য তাঁরা তাবিজ-কবজে বিশ্বাস করেন। কেউ অসুস্থ হলে তাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। ত্রিপুরাপাড়ার ‘ঝাড়ফুঁকই’ অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা।

আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ৩৯ জন এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বিআইটিআইডির সহকারী অধ্যাপক এনশাদ একরাম উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ শিশুই এখন সুস্থ। তিনটি শিশুর একটু শ্বাসকষ্ট রয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে একজন আইসিইউতে (নিবিড় পিরচর্যা কেন্দ্র) রয়েছে। বাকিরা সুস্থ বলে জানান হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক বাসনা মুহুরী।

নয় শিশু মারা যাওয়ার বিষয়টি বুধবার দুপুরে জানাজানি হওয়ার পর ঢাকা থেকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি বিশেষজ্ঞ দলকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইইডিসিআরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, রোগীদের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চূড়ান্তভাবে জানা যাবে কী রোগে তারা আক্রান্ত।

গতকাল বেলা দেড়টার দিকে পাহাড়চূড়ার ত্রিপুরাপাড়া থেকে জ্বরাক্রান্ত ছয় শিশুকে হাসপাতালে পাঠান স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ ছাড়া আরেকটি পরিবার তাদের শিশুকে পরীক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদিকে ত্রিপুরাপাড়ায় এর আগে কখনো স্বাস্থ্যকর্মীরা যাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের তদন্ত করতে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে।