দুর্গত এলাকায় গোখাদ্যের সংকট

বন্যাদুর্গত এলাকায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সেতু, সড়ক ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া মালিকেরা গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ছবিটি সম্প্রতি মেলান্দহ উপজেলার কুলিয়া-জাফরশাহী পচাবহলা সড়কের সাদিপাটি গ্রাম থেকে তোলা l প্রথম আলো
বন্যাদুর্গত এলাকায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সেতু, সড়ক ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া মালিকেরা গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ছবিটি সম্প্রতি মেলান্দহ উপজেলার কুলিয়া-জাফরশাহী পচাবহলা সড়কের সাদিপাটি গ্রাম থেকে তোলা l প্রথম আলো

জামালপুরের মেলান্দহ ও ইসলামপুর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বসতভিটা ও গোয়ালঘরে পানি ঢুকে পড়ায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মালিকেরা। বেশি দাম দিয়েও কোথাও খড় ও ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে গবাদিপশুগুলো। গত শুক্র ও শনিবার দুর্গত এলাকা ঘুরে এ অবস্থা দেখা গেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুরে প্রায় ৩০ হাজার এবং মেলান্দহে প্রায় ২০ হাজার গবাদিপশু বন্যার কারণে সংকটে রয়েছে। দুর্গত এলাকায় তীব্র গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এসব গবাদিপশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ও বন্যায় করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রতিটি বন্যাদুর্গত উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের একটি করে দল কাজ করছে।

মেলান্দহ উপজেলার কুলিয়া, দুরমুট, মাহমুদপুর, নাঙলা ও ঝাউঘরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ইসলামপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গত শুক্র ও শনিবার এসব এলাকায় গিয়ে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বসতবাড়িতে খড়ের স্তূপ পানির নিচে ডুবে রয়েছে।

গোচারণ মাঠগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় রাস্তার দুই পাশে ও সেতুর ওপর ছোট ছোট চালা তৈরি করে গবাদিপশু রাখা হয়েছে। গবাদিপশুর জন্য খড় বা ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। খাবার না পেয়ে সেগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেওয়ায় মালিকেরা অনেকটা বাধ্য হয়ে পশুগুলোকে বন্যার পানি খাওয়াচ্ছেন। এতে গবাদিপশুর পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। ওই সব এলাকায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসা দল কাজ করার কথা থাকলেও কোথাও তাদের দেখা যায়নি।

গত শনিবার বেলা একটার দিকে মেলান্দহ উপজেলার কুলিয়া-জাফরশাহী পচাবহলা সড়কে গিয়ে কথা হয় সাদিপাটি গ্রামের মো. শহিদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি চার দিন আগে পাঁচটি গরুসহ ওই সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ির উঠানে বুকসমান পানি। বাড়িতে খড়ের স্তূপ তলিয়ে গেছে। খড় বা ঘাস খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেকটা বাধ্য হয়ে বন্যার পানি খাওয়াচ্ছেন গরুকে। এতে গরুর পেটের পীড়া হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইসলামপুরের পূর্ব বামনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি সেতুর ওপর ১০-১৫টি গরু রাখা। আনু মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, ‘বন্যার কারণে এসব পশু মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চারপাশে সব মাঠঘাট তলিয়ে গেছে। কোথাও খড় বা ঘাস নেই। সব টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। গরুকে খাওয়ানোর মতো পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। গত বন্যায় সরকারিভাবে পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছিল। এবার এ রকম কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজনকে খুঁজে পাচ্ছি না।’

এ উপজেলার বলিয়াদহ গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, ‘গরু-বাছুর নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছি। নয় দিন ধরে সেতুর ওপর চারটি গরু ও একটি বাছুর নিয়ে রয়েছি। কোথাও খড় বা ঘাস পাচ্ছি না। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ গরু-ছাগল পালন করেন। তাই বেশির ভাগ মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অনেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা দিয়ে চার গুণ বেশি দামে খড় ও ঘাস কিনে গরুগুলো বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তবে অনেকের কাছে টাকা নেই।’

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি উপজেলায় একজন ভেটেরিনারি সার্জনের সমন্বয়ে চিকিৎসা দল গঠন করা হয়েছে। তাঁরা সব সময় দুর্গত এলাকার গ্রামে গ্রামে ঘুরে গবাদিপশুগুলোকে চিকিৎসা ও মালিকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। গোখাদ্য বিতরণের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বিতরণ করা হবে। তা ছাড়া দুর্গত এলাকায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের টিম খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় নৌকায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সময় লাগছে।