বগুড়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট পানিবাহিত রোগ বাড়ছে

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বন্যাকবলিত দুর্গম চরাঞ্চলের ৯৩টি গ্রামে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানকার নলকূপগুলো এখনো ডুবে থাকায় লোকজন দূষিত পানি ব্যবহার করছে। ফলে পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে বগুড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুজ্জামান বলেন, সারিয়াকান্দির দুর্গত ৯৩টি গ্রামের ১১ হাজার ২৪৫টি নলকূপ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার নলকূপ পানিতে পুরোপুরি ডুবে রয়েছে। নদীভাঙন ও স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে এবং সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ২৪৫টি নলকূপ। তিনি আরও বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলেও পানি বিশুদ্ধকরণ ছাড়া দুর্গত এলাকার কোনো নলকূপ নিরাপদ হবে না। পানি নেমে যাওয়ার পর ব্লিচিং পাউডার দিয়ে বিশুদ্ধ করতে হবে। ১০ লিটার পানি বালতিতে ঢেলে তাতে দুই চামচ পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার মেশাতে হবে। এরপর পাউডার মেশানো পানি নলকূপের পাইপে ঢেলে দিতে হবে। ঘণ্টাখানেক পর নলকূপের মাথা লাগিয়ে কিছুক্ষণ পানি চেপে ফেলে দিতে হবে। ব্লিচিং পাউডারের গন্ধ কমে গেলে নলকূপের পানি পান করা যাবে।

১৫ জুলাই সরেজমিনে সারিয়াকান্দি উপজেলার চর চকরতিনাথ, চর কমরজাপাড়া, চর শিমুলবাড়ি, চর ধনারপাড়া, রোহদহ, ফকিরপাড়া, ঘুঘুমারিসহ দুর্গম বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বন্যাকবলিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানকার কয়েক হাজার নলকূপ এখনো পানির নিচে রয়েছে। নদীভাঙনে বিলীন কয়েকটি চরের হাজারখানেক নলকূপ পানির তোড়ে ভেসে গেছে এবং সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে দুর্গত এলাকায় নিরাপদ পানির তীব্র সংকট রয়েছে। দূষিত পানির মধ্যে বাস করায় মানুষ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

চকরতিনাথা চরের রোজিনা বেগম বলেন, ‘দিনরাত পানিতে থাকিচ্চি। হাত–পাওত চুলকানি-ঘা হচ্চে। সব কল পানির নিচে। খাওয়ার পানির খুব কষ্ট।’ খাটিয়ামারি চরের গৃহবধূ নিলুফা বেগম বলেন, ‘এ চরত ২৫০টা পানির কল আচল। ব্যামাকগুলা একন পানির নিচে। সগলি হামরায় বানের পানি খাচ্চি।’

বন্যাকবলিত খাটিয়ামারি চরে গিয়ে দেখা গেল, পানিবাহিত চর্মরোগ ও চুলকানিতে আক্রান্ত হয়েছেন জহুরা বানু, রেশমা বেগম, সাজাহান আলী, মোকসেদ আলী, মনিরুল ও আতিক।

বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, বন্যাদুর্গত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবায় ১৩টি অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। চর্মরোগ বা যেকোনো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এসব কেন্দ্র কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে।

মৎস্য চাষিদের ক্ষতি ৯০ লাখ টাকা

এদিকে বন্যায় বগুড়ার ৩টি উপজেলায় মৎস্য চাষিদের প্রায় ৯৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে মৎস্য বিভাগ।

বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রওশন আরা বেগম বলেন, বন্যায় ৩ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৯৩টি গ্রামের ১০০টি পুকুরে থাকা প্রায় ২৬ টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এতে প্রায় সাড়ে ২২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পুকুরের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকার।