দুর্ভোগে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা

গত ৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে ঘরবাড়ি হারানো হোসনে আরা বেগমের ঠিকানা এখন সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র। ভেদভেদীর শিমুলতলী এলাকার এই নারী নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পাহাড়ধসের পরপরই তিনি আশ্রয় নেন রাঙামাটি সরকারি কলেজে। সেখান থেকে ১৩ জুলাই রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের নবনির্মিত ছাত্রাবাসে খোলা নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয় তাঁকে। নতুন এই আশ্রয়ে এসে তিনি পড়েছেন মহা বিপদে। কারণ, সেখানে তাঁর জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। ২৮ বাই ১৪ ফুটের একটি কক্ষে ১৮ পরিবারের ৫৮ জন মানুষের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটায় শহরের হাসপাতাল এলাকায় রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের নবনির্মিত ছাত্রাবাসে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। রাঙামাটি সদর হাসপাতালের পাশে মূল সড়ক থেকে কয়েক গজ দূরে এই ছাত্রাবাসের অবস্থান। ছাত্রাবাসের টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা দালানে মোট ১৬টি কক্ষ আছে।

এই কক্ষগুলোতে পাহাড়ধসে ঘর হারানো ১৪০ পরিবারের ৫০২ জন মানুষ থাকছে। হোসনে আরা বেগম যে কক্ষে উঠেছেন, সেখানে তাঁর জন্য কোনো আড়াল নেই। মেঝেতে পাতা সারি সারি বিছানার একটিতে ঘুমান। শৌচাগারে যেতেও লম্বা লাইন ধরতে হয়।

শুধু হোসনে আরা বেগম নন, ভেদভেদী নতুনপাড়ার পারুল আক্তারেরও একই অবস্থা। তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ছোট একটি কক্ষে সাত পরিবারের ২৬ জন মানুষের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। তাঁরা দুজনসহ আটজন অন্তঃসত্ত্বা রয়েছেন ওই আশ্রয়কেন্দ্রে। মারী স্টেডিয়াম আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন আরও একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী। কোনো রকম আড়াল এবং গোপনীয়তা নেই তাঁদের। স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকলেও আলাদা করে সেবা পাচ্ছেন না তাঁরা।

হোসনে আরা বেগম বলেন, নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পর তিনি একবার চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। চিকিৎসক তাঁকে খুব সতর্ক থাকতে বলেছেন। বলেছেন নিজের যত্ন নিতে। তবে এত লোকের মাঝে সতর্ক থাকা ও নিজের যত্ন নেওয়া কঠিন। গরমে দম আটকে আসতে চায়। বাথরুমে যেতেও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস আশ্রয়কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মো. ছগির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আশ্রয়কেন্দ্রে আটজন অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন। তাঁদের নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য আমরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তবে তাঁদের স্বস্তি দিতে পারছি না। কক্ষগুলো ছোট হওয়ায় গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে।’

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মং কেউচিং মারমা প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে বেশ কিছু অন্তঃসত্ত্বা নারী আছেন। তাঁদের জন্য আরামদায়ক ও সুন্দর পরিবেশের ব্যবস্থা করা উচিত। এ ছাড়া তাঁদের এ সময় বাড়তি যত্নেরও দরকার আছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু সাহেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রের অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনার পর ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৯০ জন আশ্রয় নিয়েছিলেন। গত ১১ জুলাই তিনটি নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে বেশির ভাগ আশ্রিতকে সরিয়ে নেওয়া হয়।