শেষ হলো দুই দিনের মেধার লড়াই

বীজগণিত, সংখ্যাতত্ত্ব, গণনাতত্ত্ব ও জ্যামিতির মোট ছয়টি গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের (আইএমও) মূল পর্ব। আইএমওর নিয়মানুসারে এই ছয়টি গাণিতিক সমস্যার প্রতিটিই ছিল একেবারে নতুন, কোনো বই, পরীক্ষা বা ইন্টারনেটে আগে কোথাও এগুলো ব্যবহৃত হয়নি।

প্রথম দিনের তিন নম্বরের সমস্যাটি বেশ জটিল ছিল। কয়েকজন উপদলনেতা আর অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে আলাপ করে মনে হয়েছে, সম্ভবত গত পাঁচ বছরে এটি কঠিনতম সমস্যা। প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতায় মোটামুটি খুশি বলে জানিয়েছে।

গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে প্রবেশের পর আমাদের শহর দেখতে নিয়ে যাওয়ার কথা। হোটেলের বাইরে এসে দেখলাম আকাশের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। বাসে ওঠার আগেই একটা ঝড়ও বয়ে গেল। তাপমাত্রা ২১-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও তীব্র ঠান্ডা বাতাস আমাদের প্রায় কাবু করে ফেলে। যদিও সবাই ঠিকই বাসে উঠে পড়ি। আমরা গিয়েছি রিও অলিম্পিকের যেখানে রোইং হয়েছে, সেই লেগুনে। লেগুনের অপর পাড়ে পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে যিশুখ্রিষ্টের মূর্তি। কর্কোভাডো পাহাড়ের চূড়ায় ৯৮ ফুট উঁচু এই মূর্তি ২০০৭ সালে বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। রিও ডি জেনিরোর দক্ষিণ অঞ্চলের নানান জায়গা থেকে এটি দেখা গেলেও আমরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কুয়াশার কারণে সেটি দেখতে পাইনি। কিন্তু যখনই আমাদের বাস আবার চলতে শুরু করল, তখনই কুয়াশার আবরণ ছড়িয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠল ১৯৩১ সালের এই পাথুরে মূর্তি।

সমুদ্র উপকূলের শহর হলেও রিওতে ছোট ছোট অনেক পাহাড়-পর্বতের ছড়াছড়ি। উত্তর-দক্ষিণের শহরকে পূর্ব-পশ্চিমের ক্যারাকাও পর্বত দুই ভাগে ভাগ করেছে। ক্যারাকাওয়ের পর্বত আর জঙ্গলের কারণে রিওর তাপমাত্রা প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে। আর আমরা যখন পর্বতের নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গপথে উত্তরের শহরতলি এলাম, তখন বোঝা গেল পর্বতের মহিমা। উত্তরের আকাশ ফকফকা। মারাকানা স্টেডিয়াম হয়ে আমরা পৌঁছেছি গুনাবেরা উপসাগরের কাছে। এখানেই রয়েছে রিও সুগারলোফ পর্বতচূড়া। পাশাপাশি দুটি চূড়ার মধ্যে উঁচুটি পানির ওপরে প্রায় ১ হাজার ৩০০ ফুট। দূর থেকে দুটি চূড়াকে চমৎকার দেখায়। এই দুটি চূড়ার ছবির আউটলাইন দিয়েই এবারের আইএমওর লোগোটি তৈরি করা হয়েছে!

উল্লেখ্য, ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে চলমান ৫৮তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ছয় শিক্ষার্থী। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত গণিত উৎসবের মধ্য থেকে তাদের নির্বাচিত করেছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি।