অদূর ভবিষ্যতে নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছেন না তোফায়েল আহমেদ

তোফায়েল আহমেদ
তোফায়েল আহমেদ

পশ্চিমা দুনিয়া যাই বলুক, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও একটি নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখছেন না বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
গতকাল শনিবার সকালে দিল্লির তাজমহল হোটেলে প্রথম আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরের পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে দোসর করে বিএনপি দেশটাকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। সেই চক্রান্ত ব্যর্থ করে নির্বাচনের পর এখন নতুন সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে, সহিংসতার পরিবেশ দূর করে দেশকে উন্নয়নের সোপানে নতুনভাবে স্থাপন করে প্রবৃদ্ধির হারকে ফের ঊর্ধ্বমুখী করে তোলা।
নির্বাচনের পর তোফায়েল আহমেদই নবগঠিত সরকারের প্রথম মন্ত্রী, যিনি ভারত সফরে এলেন। সার্ক দেশগুলোর ‘পঞ্চম বিজনেস লিডার্স কনক্লেভ’-এ যোগ দিতে তাঁর দিল্লি আগমন। এই সফরে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন ও বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
আদ্যন্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও উনসত্তরের অভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ বলেন, গত পাঁচ বছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যেভাবে মজবুত হয়েছে, পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়িয়ে তা আরও বিস্তৃত করাই দুই দেশের লক্ষ্য। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন বিল লোকসভার আগামী অধিবেশনে পাস করাতে সরকার সচেষ্ট বলে মনমোহন সিং তাঁকে জানিয়েছেন।
বেশির ভাগ দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আরও একটি নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা দুনিয়ার চাপ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তোফায়েল আহমেদ পাল্টা প্রশ্ন তোলেন। বলেন, সংবিধান মেনে পাঁচ বছরের জন্য সরকার নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সরকার চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বিরোধীদের পছন্দমতো মন্ত্রিত্ব দিতে চেয়েছেন, সংলাপে বসতে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তাঁরা গোঁ ধরে ভোট বর্জন করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া এখন ভুল বুঝতে পেরে আফসোস করছেন।
তাহলে আশু ভোটের সম্ভাবনা ক্ষীণ? জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ভোট নয়। আমাদের মাথায় এখন সুশাসনের চিন্তা। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের চিন্তা। হিংসা থামানোর চিন্তা।’ তিনি বলেন, এবার যে সহিংসতা দেখা গেছে, তা অতীতে দেখা যায়নি। কোনো দিন চলন্ত বাসে ককটেল ফাটিয়ে নিরীহ মানুষকে মারা হয়নি, এবার হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, জামায়াত জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। তাদের ভোটের লড়াইয়ের অধিকার নেই। অথচ বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের সহিংস কর্মসূচির আগুনে হাওয়া দিয়েছে। এখন জনগণ থেকে ওরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ফের নির্বাচন করতে পশ্চিমা দুনিয়ার চাপ সম্পর্কে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তারা সহিংসতাকে সমর্থন করেনি। বরং খালেদা জিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছে। ভারত, রাশিয়া, চীন তো নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে, সমর্থন জানিয়েছে, পাশে থেকেছে। আমেরিকাও ক্রমশ বুঝতে পারবে, জামায়াত সন্ত্রাসবাদী দল।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ভারতের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ ছিল সন্ত্রাসবাদ। বিএনপি আমলে ভারতকে এ জন্য খুব ভুগতে হয়েছে। জামায়াত যা খুশি করে গেছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেসব বন্ধ করেছেন। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আপস করবে না, এটা ভারতও জানে।
বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনার লক্ষ্য কী? জবাবে তোফায়েল বলেন, ‘প্রাথমিক লক্ষ্য সার্ক দেশগুলো, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানো। আমাদের সরকারের আমলেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের বহর চার বছর আগের তুলনায় ১২১ শতাংশ বেড়েছে। এখন আমরা বছরে ৫৬৪ কোটি ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করি। আগের বছরের তুলনায় বাণিজ্য বৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। শুল্ক বাধা উঠে গেছে। মদ ও তামাক বাদে সবকিছুই এখন আমরা রপ্তানি করতে পারি। নন ট্যারিফ ব্যারিয়ারসহ কিছু বাধা অবশ্য রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। মনমোহন সিং কথা দিয়েছেন, আমাদের এই চাহিদার দিকটায় নজর দেবেন। আমি চাই, অতি দ্রুত ভারতে রপ্তানির পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে।’