১১ মাসে গ্রেপ্তার প্রায় পাঁচ হাজার

দিনাজপুরের পুলিশ মাদক ব্যবসায় জড়িত অভিযোগে গত ১১ মাসে ৪ হাজার ৯৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ১ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে ৯৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ছাড়া গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত ২ হাজার ৯৩০টি মামলায় বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ৩ হাজার ৯৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া মাদক সেবনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ হাজার ৫৬৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

বিরামপুর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, ২০১৭ সালের মধ্যে দিনাজপুরকে মাদকমুক্ত জেলা গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) হামিদুল আলম। মাদক যেহেতু একটি সামাজিক সমস্যা, তাই এ সমস্যা সমাধানে সমাজের সব শ্রেণি–পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে এ বছরের জুন পর্যন্ত মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবীদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, দিনাজপুরে এত কম সময়ে এত পরিমাণ মাদক ব্যবসায়ী কখনো গ্রেপ্তার হয়নি। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের আগে কখনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি।

দিনাজপুর শহরের মাদক নিরাময় কেন্দ্র অশ্রুর পরিচালক কাজী জাফরুল্লাহ্ জানান, দিনাজপুরে মাদকাসক্তের এ সমস্যাটি আগে শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে প্রত্যন্ত গ্রামের লোকেরা চিকিৎসা নিতে আসছে। এ থেকেই মাদকের ভয়াবহতা অনুমেয়।

দিনাজপুরের এসপির কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি জুলাই মাস পর্যন্ত মাদক ব্যবসা ছেড়ে আত্মসমর্পণ করেছেন ৭৫০ জন। এর মধ্যে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ পুনর্বাসন করেছে ২৬০ জনকে। পুলিশ সুপারের নিজস্ব অর্থায়ন ও তদারকিতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ২৫ জনকে।

নবাবগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের মজিদা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। মাদকের মামলায় তাঁরা সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হতে বসেছিলেন। গত বছর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সেলাই মেশিন পান তিনি। বর্তমানে সেলাইয়ের কাজ করে স্বাবলম্বী।

হাকিমপুর পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন বলেন, মাদকের সহজলভ্যতার অন্যতম উৎস স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ী ও বহনকারী। বর্তমানে মাদকের খুচর ব্যবসায়ী ও বহনকারীদের কর্মসংস্থানের যে ধারা চালু হয়েছে, সেটি অব্যাহত রাখতে পারলে অচিরেই দিনাজপুরে মাদক ব্যবসা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আসবে।

পুলিশ সুপার হামিদুল আলম বলেন, দিনাজপুর সীমান্তবর্তী জেলা। তিনি অনুসন্ধানে জানতে পারেন, এখানে সংগঠিত অপরাধের ৯৯ শতাংশই মাদকের কারণে। এ ছাড়া দেশের মাদকের একটি বড় অংশের চালান যেত দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে। তাই তিনি যোগদান করার পর মাদক নির্মূলের ঘোষণা দেন। এ কাজে ব্যাপক অভিযানের পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণি–পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করেছেন। মাদক নির্মূলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে জানান এসপি।