দুই মাস পর ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ

রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদরের তিনটি পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিসংযোগের দুমাস পর ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী একই নকশায় ২১২টি বসতবাড়ি ও ৮টি দোকানঘর তৈরি করা হবে। সরকারের এমন উদ্যোগের খবরে মিশ্র প্রতিক্রয়ার সৃষ্টি হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের মধ্যে। তাঁদের অনেকে সরকারের তৈরি বাড়ির বদলে ক্ষতিপূরণের টাকা চান।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোছাদ্দেক মেহেদী ইমাম বলেন, ২৪ জুলাই তাঁর কাছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, লংগদুর তিনটিলা, মানিকজোড়ছড়া ও বাত্যাপাড়া গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর বাড়ি তৈরি করে দেবে সরকার। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে বাড়ির নকশাও পাঠাতে বলা হয়েছে।
লংগদুর ইউএনও মো. মোছাদ্দেক মেহেদী ইমাম বলেন, সেমিপাকা বাড়িগুলোতে তিনটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগার থাকবে। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
গত ২ জুন লংগদু ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা, মানিকজোড়ছড়া ও বাত্যাপাড়া গ্রামে পাহাড়িদের দুই শতাধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় গুনমালা নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা তাঁদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এই দাবি যত দিন পর্যন্ত নিশ্চিত করা না হয় তত দিন সরকারি কোনো সহায়তা গ্রহণ করেননি। ১২ জুলাই জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান লংগদু জেলা পরিষদের বিশ্রামাগারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দেন এবং সরকারি সহায়তা নেওয়ার অনুরোধ করেন।
লংগদুর আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তরা ঘরের বদলে টাকা দাবি করে আসছি এ পর্যন্ত। কিন্তু তারপরও আমাদের দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে। সরকার বাড়িঘর নির্মাণ করবে ঠিকাদারের মাধ্যমে। এতে বাড়িগুলো নিম্নমানের হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনটিলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মনি শংকর চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘরগুলো ছিল ভিন্ন ভিন্ন নকশায় তৈরি। এখন সরকার সব বাড়ি একই নকশায় করতে চায়। যেটা আমরা মানতে পারছি না। তা ছাড়া এখানকার অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ায় কমপক্ষে ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সে তুলনায় ৫ লাখ ২৫ হাজার কিছু নয়। এর মধ্যে আবার ভ্যাট ও ঠিকাদারের লাভ রয়েছে।’
লংগদুর ইউএনও প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠি পাওয়ার পর প্রকৌশলীর মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে দেওয়া হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা আমাকে মৌখিকভাবে বাড়িঘর নিমার্ণের বদলে টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। টাকা বা বাড়িঘর নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়ে আমার করার কিছুই নেই। সরকার যেটা সিদ্ধান্ত দেয় আমাকে সেটা করতে হবে।’