ফেসবুকে অশ্লীল ছবি ছড়ানোয় তরুণীর আত্মহত্যা, গ্রেপ্তার ১

‘আলম আমার নাম দিয়ে ফেইস বুক আইডি খুলে, আমার অজান্তে আমার মোবাইল থেকে আমার ছবি চুরি করেছে। আমার ছবি সে ফেইস বুকে ছেড়ে দিয়েছে। আমার নামে আইডি খুলে সে অশ্লীল ভাষায় চ্যাট করেছে। আলম আমার ছবি ফেইস বুকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বাধ্য করেছে এ পৃথিবী ছাড়তে। আমার মৃত্যুর জন্য আলমই দায়ী।’ আত্মহত্যার আগে এই নোট লিখে রেখে গিয়েছে কুমিল্লার লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী স্মৃতি আক্তার। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রী নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা এই নোট পান।

পাঁচ পৃষ্ঠার ওই সুইসাইড নোটে কলেজছাত্রী তাঁকে মানসিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেছে। ওই নোটের সূত্র ধরে পুলিশ গতকাল সোমবার সকালে আলম হোসেনকে (২৩) লাকসাম পৌরসভার উত্তর পশ্চিমগাঁও-সংলগ্ন রাজঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। জয়নাল আবদীন ওরফে লাল মিয়ার ছেলে আলম।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের অশ্বতলা গ্রামের বিল্লাল হোসেনের কলেজপড়ুয়া মেয়ে স্মৃতি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। ওই দিন রাতেই স্মৃতির মা অহিদা বেগম বাদী হয়ে লাকসাম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। স্মৃতিকে দাফনের পর শনিবার সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন ওই সুইসাইড নোট খুঁজে পান। পরে তাঁরা ওই সুইসাইড নোট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

স্মৃতি আক্তারের মা অহিদা বেগম বলেন, ‘সেলাইয়ের কাজ ও টিউশনি করে আমার মেয়ে পড়াশোনার খরচ চালাত। পড়াশোনা করে একদিন সে বড় হবে। তার সে স্বপ্ন পূরণ হলো না। আলম কলেজে যাওয়ার পথে তাকে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি আলমের পরিবারকে জানানো হলে ওই ছেলে আমার মেয়েকে হত্যার হুমকি দেয়। এরপর ফেসবুকে খারাপ ছবি পোস্ট করে। ওই ছবি দেখে লজ্জায়, অপমানে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে।’

স্মৃতির বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি ওই ঘটনার বিচার চাই। আলমের কারণে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

লাকসাম থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘বখাটে আলম কলেজছাত্রী স্মৃতিকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। প্রাথমিক তদন্তে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।’