যৌতুকের টাকা না পেয়ে নির্যাতন

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় যৌতুকের নির্যাতন সইতে না পেরে আছমা আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। গত রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নের বলাখাল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নিহত গৃহবধূ আছমার শাশুড়ি হাজেরা বেগমকে রাতেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। স্বামী ও শ্বশুর পালিয়েছেন। তাঁর স্বামীর নাম ফারুক মিয়া।

নিহত গৃহবধূর পরিবার, পুলিশ, মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের বিলঘর গ্রামের শাহ আলম মিয়ার মেয়ে আছমার সঙ্গে তিন বছর আগে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বলাখাল গ্রামের রেনু মিয়ার ছেলে ফারুকের বিয়ে হয়। বিয়েতে ১ লাখ টাকা ও ৭৫ হাজার টাকার আসবাব যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়। আছমা ও ফারুকের ১৮ মাস বয়সী একটি ছেলেও রয়েছে।

বছরখানেক আগে ফারুক বিদেশ থেকে একেবারে চলে আসেন। সেই থেকে আছমার ওপর যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু হয়। তিন মাস আগে আবারও বিদেশ যাওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন ফারুক ও তাঁর পরিবার। টাকা না দেওয়ায় শুরু হয় নির্যাতন। মেয়েকে বাঁচাতে সপ্তাহখানেক আগে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেয় আছমার পরিবার। গত রোববার আরও দেড় লাখ টাকার জন্য চাপ দেন ফারুক ও তাঁর পরিবার। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আছমাকে মারধর করেন ফরুক। একপর্যায়ে আছমা ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। রাতে ফারুক মুঠোফোনে ফোন করে শ্বশুরবাড়িতে খবর দেন।

রাতেই নিহত গৃহবধূর বড় ভাই খোকন মিয়া বাদী হয়ে স্বামী ফারুক, ফারুকের বাবা রেনু মিয়া, মা হাজেরা বেগম, দুই বোনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আত্মহননে প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। রাতেই পুলিশ আছমার শাশুড়ি হাজেরা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে গতকাল সোমবার সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেলে নিহত আছমার পরিবারের কাছে তাঁর লাশ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

নিহত আছমার ভাই খোকন মিয়া বলেন, বিদেশ থেকে এসেই যৌতুকের দাবিতে তাঁর বোনের ওপর নির্যাতন শুরু করেন ফারুক। বোনের শান্তির কথা ভেবে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আরও দেড় লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তাঁর বোনকে নির্যাতন করা হয়। এ নির্যাতন সইতে না পেরে বোন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবু মো. শাহজাহান কবির বলেন, যৌতুকের নির্যাতনের জন্য আত্মহত্যার অভিযোগে নিহত গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর–শাশুড়ি ও দুই ননদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিরা পালিয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।