ফের জাহাঙ্গীরনগরে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ

শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক। ছবি: প্রথম আলো
শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক। ছবি: প্রথম আলো

মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে তাঁরা এ অবরোধ শুরু করেন। ‘প্রতিবাদের নাম জাহাঙ্গীরনগর’—এই ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

এ দিকে প্রশাসন গতকাল সোমবার অবরোধের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহারের বিষয় নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দিলেও এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।

গত ২৬ মে ভোরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন সিঅ্যান্ডবি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নাজমুল হাসান ও মেহেদি হাসান নামের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর ও শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন মামলা করে। সেই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে একই দাবিতে তাঁরা অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন।

আজ সকাল সাড়ে আটটায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটক অবরোধ করেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় ভবনের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। সাড়ে নয়টার দিকে রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ জানান। কিন্তু মামলা প্রত্যাহার না হলে অবরোধ তুলে নেওয়া সম্ভব নয় বলে পাল্টা জবাব দেন শিক্ষার্থীরা।

সকাল ১০টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম প্রশাসনিক ভবনে আসেন। ভেতরে ঢুকতে না পেরে তিনিও ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। এ সময় সেখানে ছিলেন দুই সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আমির হোসেন, অধ্যাপক আবুল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ শেখ মনজুরুল হক, প্রক্টর তপন কুমার সাহাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা প্রায় ১০-১২ জন শিক্ষক।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রেজিস্ট্রার দ্বিতীয় দফায় শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। শিক্ষার্থীরা আবারও তাঁদের দাবির কথা তুলে ধরেন। এ সময় রেজিস্ট্রার বলেন, ‘এখন এ বিষয়ে কোনো কথা হবে না। তোমরা কর্মচারীদের ভেতরে ঢুকতে দাও।’

শোক দিবস পালনের প্রস্তুতির জন্যও তিনি শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নিতে আহ্বান জানান। তখন শিক্ষার্থীরা পাল্টা জবাব দেন, ‘আমরা এই আন্দোলনের ভেতর দিয়েই শোক উদ্‌যাপন করছি।’

প্রায় ২০ মিনিট কথোপকথনের পর রেজিস্ট্রার তাঁর কার্যালয়ে চলে যান। উপাচার্য সেখানে অপেক্ষা করছিলেন।

প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। ছবি: প্রথম আলো
প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। ছবি: প্রথম আলো

বেতন তুলতে পারছেন না কর্মচারীরা

এদিকে আজ অবরোধের কারণে কর্মচারীরা বেতন তুলতে পারছেন না। বেতনের জন্য কর্মচারীরাও প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে ‘প্রতিবাদের নাম জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের অন্যতম মুখপাত্র এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাসুক হেলাল বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনা করে বেতন তোলার সুযোগ করে দিতে আমরা সংশ্লিষ্ট কিছু কার্যালয় আজ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবরোধের আওতামুক্ত রাখব।’

গত ২৬ মে ভোরে ক্যাম্পাসসংলগ্ন সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় নাজমুল হাসান ও মেহেদি হাসান নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এই দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, ঘাতক চালকের শাস্তি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে পরদিন ২৭ মে বেলা পৌনে ১১টা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ৩১ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করে প্রশাসন। শিক্ষকদের একটি অংশ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।