যমুনেশ্বরীর চাকলা ঘাটে সেতু নেই, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার যমুনেশ্বরী নদীর চাকলা ঘাটে সেতু নেই। শুকনো মৌসুমে এখানে স্থানীয় লোকজন বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করে। কিন্তু বর্ষায় নৌকা বা কলাগাছের ভেলাই তাদের একমাত্র ভরসা। এতে ভোগান্তির শিকার হয় এলাকার বাসিন্দারা।
তবে বর্ষায় নৌকা বা কলাগাছের ভেলায় চলাচলে সবচেয়ে ঝুঁকির শিকার হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে কুর্শা ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে যমুনেশ্বরী নদীর ওই খেয়াঘাট অবস্থিত। ওই খেয়াঘাটের চারপাশে জয় বাংলা, কবিরাজপাড়া, খিয়ারপাড়া, হাজিপাড়া, কুঠিপাড়া, জুম্মাপাড়া, সরকারপাড়া, চাকলা, জলুবার, বানয়িপাড়া, জেলেপাড়া, নদীর পার, পাচানীসহ ১৫টি গ্রাম। এই ঘাটে সেতু না থাকায় এসব গ্রামের ২০ হাজার মানুষকে অতিকষ্টে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, ওই খেয়াঘাটে নৌকায় করে অতিকষ্টে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাচ্ছে। কৃষক-দিনমজুরেরাও নৌকায় করে পারাপার হচ্ছেন। এ সময় চাকলা গ্রামের শরিফ উদ্দিন (৪০) বলেন, ‘সরকার কত কিছু করে, খালি হামার গ্রামের কাছত পুল কোনা বানের না পারে। এটে একনা পুলের জন্য হামার কষ্ট চিরকাল।’ একই গ্রামের চান মিয়া (৪২) বলেন, ‘বাহে, হামার বাপ-দাদারাও এই নদীর জন্যে কষ্ট প্যায়া মরি গেইছে। হামরাও যাবার পথে, তবু এটেকোনা পুল হয়ছে না।’
জয় বাংলা গ্রামের কৃষক ছহির আলী (৫০) বলেন, ‘নির্বাচন আসলে নেতারা কয়, তোমার নদীটা তো বড় সমস্যা। ভোট দেও, এবার ব্রিজ হয়া যাইবে। হামরা তাতে মাতি ভোট দেই। কিন্তু ব্রিজ আর হয় না।’
বানিয়াপাড়া গ্রামের বিষ্ণু রায় (৫৫) বলেন, ‘নদীতে সেতু না থাকায় ধান, পাট, চাল, শাকসবজি শহরে নিয়া বিক্রি করা মুশকিল। বাধ্য হয়ে কম দামত জিনিসপত্র বেচতে হয়।’ নদীর পাড় গ্রামের কাইয়ুম হক (৩৩) বলেন, ‘যদি রাইতোত কায়ও বাড়িত মরিও যায়, তাও রোগী মেডিকেলত নিয়া যাওয়া মুশকিল।’
রহিমাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামলী রানী বলেন, চাকলা ঘাটে সেতু না থাকায় বর্ষাকালে নদীর ওপারের পাচানী, জলুবার, নারায়ণজন গ্রামের বেশির ভাগ শিশু ভয়ে স্কুলে আসতে চায় না।
ঘাট এলাকার বাসিন্দা কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তুহিনুর ইসলাম বলেন, ১৫টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ বারবার সেতু দাবি করে পাবে না, এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে।
কুর্শার ইউপি চেয়ারম্যান আফজালুল হক বলেন, এখানে সেতু নির্মিত হলে অবহেলিত এ অঞ্চলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আহাম্মেদ হায়দার বলেন, শিগগিরই খোঁজ নিয়ে ওই স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হবে।