সাড়ে পাঁচ হাজার আসামি গ্রাম পুরুষশূন্য

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্র খানাবাড়ি গ্রামে গত শনিবার রাতে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।
গত রোববার রাতে করা এই মামলায় ৬৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা সাড়ে পাঁচ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত দুই দিনে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল সোমবার সকালে রামভদ্র খানাবাড়ি গ্রামে গিয়ে কোনো পুরুষ লোককে দেখা যায়নি। এমনকি নারীরাও গ্রামছাড়া। কেবল বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোকজন এবং ছোট ছেলে-মেয়েদের দেখা গেছে। যাঁরা গ্রামে আছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গ্রেপ্তার এড়াতে সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। গ্রামবাসীর অনেকে অভিযোগ করেন, শনিবার রাতে সংঘর্ষের সময় পুলিশ তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। গতকাল বেলা ১১টায় গ্রামে ঢুকতেই দেখা হলো এক বৃদ্ধের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘বাবা, এই দ্যাকেন না, হামার ঘরের জিনিসপতরো পুলিশের নোকজন ভাঙি ফেলাচে।’
আরেকজন অভিযোগ করে বলেন, ‘যারা বাড়ির জিনিসপতরো ভাঙলো, তারা দোষী-অদোষী সবাইকে যে গেরেফতার করব্যার নোয়ায় তার বিশ্বাস কী। তাই গয়ের সবাই পলে গেচে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা জামায়াতের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তারের নামে বাড়িঘর ভাঙচুর করে এর দায় চাপাচ্ছে জামায়াত-শিবিরের ওপর। আবার পুলিশ মামলা করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক জানান, গতকাল জামায়াতের কর্মী আলম মিয়া, রেজাউল করিম, রায়হান আলী ও শিবিরের কর্মী জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১২টার দিকে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ হত্যা ও নাশকতা মামলার আসামি ধরতে রামভদ্র খানাবাড়ি গ্রামে যায় পুলিশ। পরে স্থানীয় জামায়াত নেতা শাহাজাহান ওরফে ভুট্টু, আল-আমিন ও মফিজুল হককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় জামায়াত-শিবিরের একদল কর্মী তাঁদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গ্রামের কদমতলী মসজিদের মাইক থেকে ডাকাত পড়েছে বলে প্রচার করেন জামায়াতের কর্মীরা। মাইকে প্রচারের পর জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার কর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তাঁরা চারদিক থেকে পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। রাত দুইটার দিকে গাইবান্ধা ও রংপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গ্রাম ঘিরে গুলিবর্ষণ করে। প্রায় নয় ঘণ্টায় এক হাজার ১৬৩টি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে ২৪ জন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪৫ ব্যক্তি আহত হন।