ভাঙা টিনের ঘরে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান

রংপুরের তারাগঞ্জের পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেঞ্চ ও কক্ষসংকটে ঠাসাঠাসি করে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার তোলা ছবি l প্রথম আলো
রংপুরের তারাগঞ্জের পলাশবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেঞ্চ ও কক্ষসংকটে ঠাসাঠাসি করে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার তোলা ছবি l প্রথম আলো

নড়বড়ে টিনের দোচালা ঘর। ভাঙা দরজা। জানালা-ছাদ নেই। বেঞ্চ আছে ১২টি। ছোট ৩টি ভাঙাচোরা শ্রেণিকক্ষ। গ্রীষ্মে গরমে হাঁসফাঁস করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। বর্ষায় টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের বই-খাতার ওপরে পড়ে বৃষ্টির পানি।

এই চিত্র রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পলাশবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ১৫ বছরেও বিদ্যালয়টির জন্য কোনো ভবন হয়নি। ভাঙাচোরা টিনের নড়বড়ে ঘরে ঝুঁকি নিয়েই চলছে পাঠদান।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলঘরের বাঁশের খুঁটিগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে। টিনে ছিদ্র এবং কোথাও কোথাও দুমড়ে গেছে। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে ভাঙা বেঞ্চে গাদাগাদি করে বসে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। যারা বেঞ্চে বসার জায়গা পায়নি তারা দাঁড়িয়ে ক্লাস করছে।

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা খাতুন বলে, ‘টিনের ছোট ঘরোত বসি গরমে ক্লাস করতে কষ্ট হয়। রোদে গাও পোড়া যায়। বৃষ্টি হলে টিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে, বই-খাতা ভিজে যায়।’ ওই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী মাহাবুল ইসলাম বলে, ‘আগোত আসলে বেঞ্চোত বসিপার জায়গা পাওয়া যায়, দেরিতে আসলে দাঁড়ে পড়ালেখা করির নাগে। তাতে খুব কষ্ট হয়।’

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাইমিনা আক্তার বলে, ‘অন্য স্কুলোত পাকা ঘর আছে, নয় বেঞ্চ আছে। খালি হামার স্কুলটাত নাই। দাঁড়ে ক্লাস হাত-পা ব্যাথা করে।’

ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এনামুল হক বলেন, ‘ভাই, হামার গ্রামের ছাওয়াদের (শিশুদের) কষ্ট কায়ও দেখোছে না। যে স্কুলোত পাকা ভবন আছে, সেই স্কুলোতেই ফের নতুন ইটের পাকা ভবন হওচে। হামার গ্রামের ছাওয়ারা ভাঙা ঘরে গরমে কষ্ট করে ক্লাস করলেও হামার স্কুলটা পাকা হওচে না।’

বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যালয়টির করুণ অবস্থায় শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পাঠদান করাতে পারছেন না। বিদ্যালয়ের চক, ডাস্টার, পেনসিল, হাজিরা খাতাসহ শিক্ষার উপকরণ প্রতিদিন চটের ব্যাগে ভরে শিক্ষকদের বাড়ি থেকে আনা-নেওয়া করতে হয়।’

 ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয়টি নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখানে ১৮৪ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য বেঞ্চ মাত্র ১২টি। বেঞ্চসংকটে শিশুদের এক বেঞ্চে ৬ জন করে বসে ক্লাস করতে হয়। বৃষ্টি এলে টিন চুইয়ে পানি পড়ে। রোদ উঠলে টিন থেকে আগুনের মতো তাপ বের হয়। ক্লাসে থাকা যায় না।’

প্রধান শিক্ষক নওশের আলী বলেন, ‘২০০২ সালে ৩৩ শতক জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করা হয়েছে। এখন গরমে শিশুরা রুমে বসতে চায় না। আর বসলেও প্রচণ্ড গরমে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ থাকে না।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমিতা ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়টির সমস্যার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। কীভাবে ওই বিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান করা যায়, তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন আগে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা স্কুলটির সমস্যার কথা আমাকে বলেছেন। শিগগিরই সমস্যার সমাধান করা হবে।’