'গহের আলীর তাল সাম্রাজ্যে' পড়বে কুঠারের আঘাত

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় ‘নিঃস্ব গহের আলীর তাল সাম্রাজ্যে’ এবার পড়বে কুঠারের আঘাত। কাটা হবে তাঁর রোপণ করা সারি সারি তালগাছ। মুছে যাবে তাঁর স্মৃতি। এই গহের আলী ছিলেন নিতান্ত ভিখারি। কিন্তু সড়কের পাশে তালগাছ লাগিয়ে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর সেই সাম্রাজ্য। এ জন্য ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জাতীয় পরিবেশ পদক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর হাতে এই পদক তুলে দিয়েছিলেন ২০০৯ সালে। তখন গহের আলীর বয়স ছিল ১০৭ বছর। পরের বছরই গহের মারা যান। রাজশাহী-নওগাঁ সড়কের ধারে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত তালগাছগুলো আজও আছে। ইতিমধ্যে অনেক বড় হয়েছে। গাছে গাছে তাল ধরেছে। কিন্তু এবার সেগুলোসহ ৩০ হাজার গাছ কাটা হবে।

গহের আলীর বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার শিকারপুর গ্রামে। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মহাদেবপুর উপজেলার বলিহার সেতু থেকে খোর্দ্দ নারায়ণপুর সেতু পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে তিনি তালের চারা লাগিয়েছিলেন। এ ছাড়া এলাকার গোরস্থান ও পতিত জায়গায় সব মিলিয়ে গহের অন্তত ১২ হাজার তালগাছ লাগিয়েছিলেন। ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন ‘নিঃস্ব গহের আলীর তাল সাম্রাজ্য’ প্রকাশিত হয়। অভিনন্দিত হন গহের। পরের বছর পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদান রাখার জন্য গহেরকে জাতীয় পরিবেশ পদক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ওসমানী মিলনায়তনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ মেলার উদ্বোধন ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে গহের আলীর হাতে এই পদক তুলে দেন।

গহের আলী বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর হাতে রোপণ করা তালের চারাগুলো এখন রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে কত বড় হয়ে গেছে। রাজশাহী বন বিভাগ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ওই তালগাছসহ এই সড়কের প্রায় ৩০ হাজার গাছ কাটতে হবে। এ জন্য গাছগুলোর ছাল তুলে ইতিমধ্যে নম্বর বসানো হয়েছে।

জানতে চাইলে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাদেবপুর উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত মো. সায়েম বলেন, মহাদেবপুরের সড়কের দুই ধারে যে বড় তালগাছগুলো শোভা পাচ্ছে, সেগুলো তাঁদের রোপণ করা নয়। একজন বৃক্ষপ্রেমী ভিখারির হাতে লাগানো। কিন্তু গাছগুলো সরকারি রাস্তার পাশে। এখন রাস্তা সম্প্রসারণের স্বার্থে গাছগুলো কাটা পড়বে।

সওজ বিভাগের নওগাঁ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক বলেন, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া মোড় থেকে রাজশাহীর নওহাটা সেতু পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ করা হবে। বর্তমানে রাস্তাটি ১৮ ফুট চওড়া। এতে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য এবার ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ককে যথাযথ মানে ও প্রশস্তে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ৩৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি ২৪ ফুট চওড়া করা হবে। এই দুই পাশ দিয়ে ৫ ফুট করে ১০ ফুট ‘হার্ড শোল্ডার’ থাকবে। তাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান ইত্যাদি চলাচল করবে। তিনি আরও বলেন, রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য গাছগুলো কাটতেই হচ্ছে। অন্তত এক পাশের গাছ বাঁচানো যায় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক পাশের গাছ বাঁচাতে গেলে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। আর এই অবস্থায় তা করলে কোনো জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ছে না। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে, এবার যে সংখ্যক গাছ কাটা পড়ছে, নতুন রাস্তায় বন বিভাগ এর চেয়ে ভালো মানের তিন গুণ গাছ রোপণ করবে। পরে রক্ষণাবেক্ষণ করবে।