চারদিকে থইথই পানি

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার চিকলী গ্রামের এক বছরের শিশু রাকিব হোসেনের সর্দি-জ্বর তিন দিন ধরে। তাদের ঘরবাড়িসহ পুরো এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় তারা চার দিন আগে আশ্রয় নিয়েছে মানবমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চারদিকে থইথই পানি। গতকাল মঙ্গলবার তার মা পানি ভেঙে রাকিবকে নিয়ে চিকলী বাজারে গিয়ে গ্রাম্য চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধ এনেছেন।
ছেলের জন্য ওষুধ আনতে পারলেও আরেক দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে রাকিবের মা সুফিয়া বেগমকে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসার সময় গোয়াল থেকে তিনটি গরু ও সাতটি ছাগল নিয়ে এসেছিলেন। রেখেছিলেন বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায়। এখন ওই রাস্তায়ও পানি ওঠায় গরু-ছাগল রাখা নিয়ে তাঁর এই দুশ্চিন্তা।
সুফিয়া বেগম বলেন, ‘ছোয়া-পোয়া, গরু-ছাগল নিয়া খুব কষ্টে আছি। আস্তাঘাট ডুবি যাওয়ায় হামরা কোনোটে যাবার পাওছি না। হামাক দেখিরও কাও আইসে নাই।’
গতকাল চিকলী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একমাত্র পাকা সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা কলার ভেলা ও নৌকা।
ইমানের বাজার থেকে নৌকায় করে আলমপুর ইউনিয়নের আরেকটি গ্রাম মধুরামপুর দোলাপাড়া যেতে চোখে পড়ে পানিতে ডুবে যাওয়া ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। গ্রামের পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া চিকলী নদীর তীরের ঘরগুলো আছে চরম ঝুঁকিতে। ঘর থেকে পা ফেললেই নদী। দরজার সামনে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্রোত।
ওই গ্রামের কৃষক তৈয়ব আলী (৪৫) বললেন, ‘পানি যত বাড়ছে, মানুষের কষ্টও তত বাড়ছে। একে তো মানুষের থাকার সমস্যা, তার ওপর গাভি-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে তারা।’
গ্রামের ভেতর দিয়ে নৌকায় করে যাওয়ার সময় দিনমজুর আফজাল হোসেন (৪০) বলেন, ‘কাম-কাজ নাই, কী করমো, বাবা। চার দিন থাকি পানির মধ্যে আছি। এখন পর্যন্ত কায়ও একটা দানাও দেয় নাই।’
তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবেছে রাস্তাঘাট। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। এসব মানুষকে ন্যূনতম এক কেজি করে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করতে ইউএনওকে বলেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। আমার নিজস্ব তহবিল থেকে বন্যার্ত মানুষের মাঝে খিচুড়ি বিতরণ করা হচ্ছে।’