পানি ভেঙে হেঁটে চলাচল, দুর্ভোগ

দিনাজপুরের বিরলের মোজাম্মেল হক (৫০) বন্যার খবর পেয়ে ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসেন। সড়কে পানি ওঠায় আমতলী থেকে যান চলাচল বন্ধ। এতে প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়ক হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে তাঁকে জেলা সদর পর্যন্ত যেতে হয়। গত সোমবার সদর উপজেলার পাঁচবাড়ি এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
দিনাজপুরের বিরলের মোজাম্মেল হক (৫০) বন্যার খবর পেয়ে ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসেন। সড়কে পানি ওঠায় আমতলী থেকে যান চলাচল বন্ধ। এতে প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়ক হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে তাঁকে জেলা সদর পর্যন্ত যেতে হয়। গত সোমবার সদর উপজেলার পাঁচবাড়ি এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

মো. মোজাম্মেল হক দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বাসিন্দা। থাকেন ভারতের দিল্লিতে। গত সোমবার তিনি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন। ভারত থেকে আনা কম্বলসহ মালপত্র নিয়ে বাসযোগে রওনা দেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সড়কে বন্যার পানি ওঠায় পার্বতীপুর উপজেলার আমবাড়ী এসে বাস যায় থেমে।
আমবাড়ী থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব আরও ২৫ কিলোমিটার। মোজাম্মেল আমবাড়ী থেকে আমতলী পর্যন্ত একটি ট্রলি নেন। কিন্তু এরপর সেটি আর যায় না। এখান থেকে দিনাজপুর আরও ২০ কিলোমিটার। এ এলাকায় দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। নদীটির পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর আমতলী থেকে দিনাজপুর শহর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার মহাসড়কের ওপর দিয়ে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে সড়কের অসংখ্য জায়গা ধসে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় গর্ত।
বাধ্য হয়ে মোজাম্মেল হককে মাথায় কম্বল আর পিঠে অন্যান্য মালামাল নিয়ে স্রোতের মধ্যে হেঁটে রওনা দিতে হয়। এভাবে কিছু দূর পরপর গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে দিনাজপুরে আসেন মোজাম্মেল হক। ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তাঁর সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা।
মোজাম্মেল হকের মতো দিনাজপুরে যাতায়াতকারী কয়েক হাজার নারী-পুরুষকে এ রকম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের আমতলী থেকে শহরের চুনিয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কের দুই ফুট ওপর দিয়ে আত্রাই নদীর পানি এবং চিরিরবন্দর থেকে আমতলী প্রায় ৯ কিলোমিটার সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের পুলহাট থেকে আড়াই কিলোমিটারও তলিয়ে গেছে।
বিরামপুরের নাজমুল হক যাচ্ছিলেন দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ মায়ের কাছে। নাজমুল হক বলেন, মায়ের কাছে তাঁর স্ত্রী রয়েছেন। বাড়িতে কেউ নেই। এ অবস্থায় তিনি কীভাবে বিরামপুরে ফিরবেন সেটিই ভেবে পাচ্ছেন না।
ঘোড়াঘাটের সামছুল আলম বলেন, ‘কোর্টোত আজকা হামার তো মামলার হাজিরা আছে। সময়মতো যাবাতো পারনো না। না জানি ম্যাজিস্ট্রেট ওয়ারেন্ট দেয়।’
দিনাজপুরের সুইহারির মর্জিনা খাতুন জানান, তিনি ফুলবাড়ীতে একটি সরকারি কার্যালয়ে চাকরি করেন। প্রতিদিন দিনাজপুর থেকে যাতায়াত করেন। এখন দিনাজপুর থেকে কীভাবে যাতায়াত করবেন বুঝতে পারছেন না।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক সাইফুল ইসলাম ও আ. মতিন বলেন, সড়কে বড় বড় গর্ত হয়েছে। ফলে বড় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। রিকশা বা ভ্যানজাতীয় যানবাহনও চলাচল করতে পারছে না।
জানতে চাইলে দিনাজপুর সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কামিনী কান্ত রায় বলেন, এসব সড়কে বড় বড় গর্ত দেখা দেওয়ায় বন্যার পরে যান চলাচল নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।