'ভাই মোর নামটাও লেখেন'

‘ভাই মোর নামটাও লেখেন। বানের পানিত ঘরবাড়ির ভাসি গেইছে। সেইতানে আশ্রয়কেন্দ্রে পড়ে আছু। বাড়িত গিয়ে কুনঠে থাকিমো।’ গত সোমবার কথাগুলো বললেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কাচিনীয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে আশ্রয় নেওয়া ভাবকী ইউনিয়নের সিট ভাবকী গ্রামের জয়ন্তী রানী। টানা বৃষ্টির পাশাপাশি উজানের ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে তাঁর পরিবারও সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
জয়ন্তী বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর গোটা গ্রাম পানিতে থই থই করতে থাকে। শুক্রবার সকালে তাঁদের ঘরে হাঁটুসমান পানি ওঠে। উপায় না দেখে তাঁর স্বামী বাবুল রাম ছেলে প্রশান্তকে (৩) নিয়ে ঘর ছেড়ে চলে আসেন এই আশ্রয়কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘শুনিছু হামার ঘর পানির তোড়ে ভাঙ্গি গেইছে। পানি কমি গেইলে বাড়ি যায়ে কুনঠে উঠিমো। শুনিছু তোমরা ঘর করে দিবার তানে লিস্ট করছেন। ও ভাই মোর নামটাও কুনেক লেখেন। হামারও ঘর ভাঙ্গি গেইছে।’
দুই ছেলে সুজন (৪) ও সুমনকে (২) নিয়ে ওই আশ্রয়কেন্দ্রের বারান্দায় বসে ছিলেন শিবতলা গ্রামের বসিরন বেগম। তিনি বলেন, এখানে নিজের পেট কোনো রকম ভরলেও বাচ্চা দুইটার জন্য দুধ পাচ্ছেন না। বাচ্চাগুলোর জন্য যদি আলাদাভাবে খাবারদাবার দিত, তাহলে অনেক ভালো হতো।
আশ্রয়কেন্দ্রের এক কোণে পরিবার নিয়ে বসে ছিলেন খামারপাড়া গ্রামের নুর আলম (৪৫)। পাশে স্ত্রী ফরিদা বেগম, দুই সন্তান আর মাকে নিয়ে বসে ছিলেন আহসান আলী (৪৫)। আলাপকালে আহসান আলী বলেন, শুক্রবার রাতে ঢলের পানি ঘর ভেঙে নেয়। এরপর সারা রাত ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করেছেন। এখানে চলার মতো খাওয়া পাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু এভাবে আর কত দিন থাকবেন? ভাঙা ঘর মেরামত করার সাহায্য দিলে ঘরে ফিরতে পারতেন।
খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাজেবুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার ৫৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৪৯টি গ্রাম কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলায় ৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে ৪ হাজার ৭০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া অনেকের ঘরবাড়ি পানির ঢলে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করা হচ্ছে। আমরা তাঁদের সহায়তায় পাশে থাকব।’