আ.লীগের দুপক্ষের কারণে হোমনায় বিদ্যুতায়ন বন্ধ

কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের টানাটানিতে ঝগড়ারচর গ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুই মাস আগে বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও ওই গ্রামের লোকজন এখনো বিদ্যুৎ পায়নি। উপরন্তু মিটারের জন্য যুবলীগের নেতা গ্রাহকদের কাছে ১০ হাজার করে টাকা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হোমনা অঞ্চলের পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ঝগড়ারচর। এটি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। উপজেলা থেকে তিতাস নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন ওই গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বসবাস। উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দীর্ঘ সময়ে বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত রয়েছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা। এ বছরের জুন মাসের মধ্যে হোমনা উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার কথা ছিল। এ সময়ে গ্রামের প্রায় ৬০০ গ্রাহকের পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার কথা। এ জন্য গত এপ্রিল-মে মাসে ওই গ্রামে প্রায় ছয় কিলোমিটার লাইন স্থাপন করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কুমিল্লা-৩। বিদ্যুৎ পেতে প্রতিটি গ্রাহকের ব্যক্তিগত খরচে ওয়্যারিং করার কথা। প্রতিটি আবাসিক মিটারের জন্য প্রত্যেক গ্রাহককে জামানত ৬০০ টাকা, সদস্য ফি ৫০ টাকা পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে জমা দিতে হয়।

বিদ্যুৎ-সংযোগ নেওয়ার জন্য সব মিলিয়ে ৬৫০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতি গ্রাহককে মিটারের সংযোগ নিতে উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন ১০ হাজার করে টাকা দাবি করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এ বিষয়ে মো. মহিউদ্দিন দাবি করেন, ‘যারা বলেছে মিটার পাইয়ে দিতে ১০ হাজার করে টাকা দাবি করেছি তারা অমানুষ। আমাদের গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি বসাইতে ঠিকাদারের লোকজনকে খাওয়ানো এবং খুঁটি পরিবহন করতে ৭০ হাজার টাকা খরচ করেছি আমরা। সরকার তো খুঁটি আনতে ভাড়া দেয় নাই, সেই ভাড়া আমরা দিয়েছি। আমরা এই গ্রামে বিদ্যুৎ এনেছি আমরাই সংযোগ দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘হোমনা ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় যে হারে টাকা নিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছে আমরাও সেই হারে টাকা নিয়ে সংযোগ দেব।’

তবে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও দুলালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাতু মিয়া বলেন, ‘হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মজিদ ঝগড়ারচর গ্রামে আইসা বলেছেন সাধারণ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ দিতে কোনো টাকাপয়সা যেন কেউ না নেয়। কিন্তু মহিউদ্দিন প্রতিটি মিটারের সংযোগ দিতে সবার কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা দাবি করেছে। পরে আমরা গ্রামবাসী বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুধু সরকারি খরচের টাকা ছাড়া অন্য কোনো টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুটি পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের জন্য কেউ-ই বাড়িতে ওয়্যারিং করাচ্ছেন না। একটি পক্ষে রয়েছেন মো. মাতু মিয়া এবং অন্য পক্ষে রয়েছেন মো. মহিউদ্দিন।

সরেজমিনে গত শুক্রবার ঝগড়ারচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর এলাকা থেকে নতুন লাইন নির্মাণ করে বিদ্যুতের সংযোগ ঝগড়ারচর গ্রামের ভেতরে নেওয়া হয়েছে। গ্রামের প্রায় সব জায়গাতেই বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হয়েছে। এতে তারও টানানো হয়েছে। কিন্তু মিটার না পাওয়ায় কেরোসিনের বাতিই এলাকার লোকজনের ভরসা। আবার কোনো কোনো বাড়ি এবং টং দোকানে সৌরবিদ্যুৎ জ্বলতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির হোমনা অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আক্তার হোসেন বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ রয়েছে তবে কোন পক্ষে কে রয়েছে, তা আমি জানি না। গ্রাহক নিজে ওয়্যারিং করবে এবং মিটারের জন্য ৬৫০ টাকা পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে জমা দিলে মিটার দিয়ে সংযোগ দেওয়া হবে। কেউ যদি ওয়্যারিং না করে আমাদেরই কী করার আছে।’