সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ বছরে পদার্পণ

কৃষি শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণের পথিকৃৎ হিসেবে ১৯৬১ সালের এই দিনে ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আজ ১৮ আগস্ট ৫৭ বছরে পা দিচ্ছে দেশসেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থাকলেও শোকের মাস আগস্টের কারণে তেমন কোনো কর্মসূচি হাতে নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে আগামী সেপ্টেম্বর কোনো একদিন জাঁকজমকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, পড়াশোনার মান, গবেষণাসহ নানা মানদণ্ডে ওয়েবমেট্রিক্স র‍্যাঙ্কিংয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্প্রতি দেশসেরা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। স্পেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্প্যানিশ জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলের করা ওই র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এগুলোর অধিভুক্ত কলেজের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে সেরা দেখানো হয়েছে।

 ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ১ হাজার ২০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার কৃষিবিদ তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখানে কৃষি, ভেটেরিনারি, পশুপালন, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান, কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি এবং মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের আওতায় ৪৩ বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ৬ হাজার ৬৮৭ জন শিক্ষার্থী ও ৫৭৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য রয়েছে ১৩টি হল।

৫৬ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়টির পথচলায় এসেছে বহু সাফল্য। বাউকুল, ধান, সরিষা, সয়াবিন, আলু, মুখিকচুর বেশ কয়েকটি করে জাত উদ্ভাবন করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। তারাবাইম, গুচিবাইম, বড় বাইম, কুঁচিয়া, গাঙ মাগুর, কই ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজননপদ্ধতিও আবিষ্কার করা হয়েছে। মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ প্রযুক্তি, কচি গমের পাউডার উত্পাদন, বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার, হিমায়িত ভ্রূণ থেকে ভেড়ার কৃত্রিম প্রজননপদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে এখানে। কলা ও আনারস উত্পাদনের উন্নত প্রযুক্তি, শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষের প্রযুক্তি, জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, মাটি পরীক্ষার সরঞ্জাম, গবাদিপশুর ভ্রূণ প্রতিস্থাপন, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার ও হাওর এলাকায় হাঁস পালনের কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এখানকার জার্মপ্লাজম সেন্টারটি দাঁড়িয়ে আছে একটা পরিণত গাছের মতো, যার ফল ভোগ করছে গোটা বাংলাদেশ।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আকবর গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ বিশ্ববিদ্যালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে গবেষণার দিক থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে এগিয়ে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে আমরা দেশসেরা হয়েছি। তবে পাঠ্যক্রম ও পাঠদান পদ্ধতিতে তুলনামূলকভাবে আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। একাডেমিক কার্যক্রম অত্যাধুনিক করাই আমাদের বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’